শেরপুরে মুজিববর্ষ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনাল

শেরপুরে গ্যালারিতে জায়গা না হওয়ায় মাঠের টাচ লাইনের পাশে দর্শকরা

শেরপুরে মুজিববর্ষ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে
সর্বমোট পঠিত : 340 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

শেরপুরে মুজিববর্ষ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রৌহা ইউনিয়ন দল। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন দলকে পরাজিত করে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এর আগে নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে অমিমাংসিত ছিল ম্যাচটি।

এখন কথায় কথায় বলতে গেলে, ফুটবলের সেই দিন আর নেই! তবে জনপ্রিয় এ খেলার দর্শক যে এখনো হারিয়ে যায়নি তার যেন প্রমাণ দিলেন সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরবাসীরা।

রৌহার রহিম মিয়া বলেন, গ্রামে-গঞ্জে অনেক ফুটবল খেলা দেহি আমরা কিন্তু এতো দর্শক আমার জীবেন আমি প্রথম দেখলাম। এই খেলার প্রথম কাপ আমাদের রৌহা মানে আমরা নিয়ে গেলাম।

পৌরসভার উত্তর গৌরীপুর মহল্লার হোসেন আলী বলেন, আমি ছোট থেকেই ফুটবল খেলার ভক্ত। যেখানে ফুটবল খেলা হয় সেখানেই দেখতে যায়। আমার ছেলে আছে তাকে ফুটবলের পিছেন দিয়েছি। আর স্টেডিয়ামে এত পরিমান দর্শক হবে আমি তা ভেবে চিন্তা করেতই পারিনাই। অনেক কষ্ট করে খেলা দেখলাম। আমার ৩৮ বছর বয়সে এত দর্শক আজকে দেখলাম।


চরশেরপুরের হারুণ মিয়া বলেন, শুনলাম ঢাকা থেকে খেলোয়ার আসছে তাই খেলা দেখতে আসছিলাম। কিন্তু এসে দেখি গ্যালীতে জায়গা নাই। পরে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একটু পরে খেলার আয়োজকরা দর্শকের চাপ দেখে মাঠের মধ্যে জায়গা করে দেন। এতে আমরা খেলা দেখলাম মনের আশাও পূর্ণ হলো। একটু কষ্ট করে খেলা দেখনেও খুব ভালো লাগছে। এরকম আয়োজন যেন আমাদের শেরপুরে অব্যহত থাকে।

পৌরসভার এক ক্ষুদে দর্শক সিহাব তার বাবার সাথে খেলা দেখতে এসেছেন। ক্ষুদে দর্শক সিহাব বললো তার কাছে খেলা অনেক ভালো লাগছে। এই টুর্নামেন্টের বেশীর ভাগ খেলায় সে দেখছে তার বাবার সাথে এসে।

ফাইনাল ম্যাচের আগে দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটের সময় জেলার আন্ধারিয়া-সুতিরপাড় তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠির গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী হিজড়াদের অংশগ্রহণে একটি মিনি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলার তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠিরা নৃত্য পরিবেশন করেন।


রোববার (১০ অক্টোবর) ছিল শেরপুর জেলার মুজিববর্ষ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে ফাইনাল ম্যাচ। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও প্রথম বিভাগে খেলা ফুটবলারদের অংশগ্রহণে ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতে রেকর্ড গড়েছে। এর আগে শেরপুরের ফুটবল ইতিহাসে কোন একটি ম্যাচে এত সংখ্যক দর্শক উপস্থিতি হয়নি।

শেরপুরে মুজিববর্ষ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রৌহা ইউনিয়ন দল। টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন দলকে পরাজিত করে তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এর আগে নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে অমিমাংসিত ছিল ম্যাচটি।

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে জায়গা না হওয়ায় মাঠের টাচ লাইনের পাশে বসেও দর্শকরা খেলা উপভোগ করেন। শেরপুরের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার দর্শক মাঠে উপস্থিত থেকে এ খেলা উপভোগ করেন।

মুজিববর্ষ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের এ ফাইনালে উভয় দলেই ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও প্রথম বিভাগে খেলা খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেন। ম্যাচের চ্যাম্পিয়ন দল ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের ১৩তম মিনিটেই সমতায় ফিরে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন। নির্ধারিত সময়ে আর কোন গোল না হওয়ায় চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণে টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ।


খেলা শেষে প্রধান অতিথি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক বিজয়ী ও বিজিত দলের মাঝে স্বর্ণ নির্মিত ট্রফি বিতরণ করেন। এ সময় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হুইপ চ্যাম্পিয়ন দলকে দেড় লাখ টাকা এবং রানারআপ দলকে এক লাখ টাকা প্রাইজমানি পুরষ্কার প্রদান করেন।

পুনস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হুইপ আতিক ঘোষণা দেন, প্রতিবছর জেলা সদরের ১৪ ইউনিয়নের দল নিয়ে এ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে। এর মধ্য দিয়ে মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এমনকি কিশোর গ্যাং অপরাধ কর্মকাণ্ড ছেড়ে শিশু-কিশোর ও যুবকরা খেলাধুলায় মনোনিবেশ করবে।

পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ। এ সময় প্রধান অতিথি হুইপ আতিউর রহমান আতিক ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে পুলিশ সুপার মো. হাসান নাহিদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, সদর ইউএনও মোহাম্মদ ফিরোজ আল-মামুন, ডিএফএর সভাপতি মানিক দত্ত,সদর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি