শ্রীবরদীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পী নূর নবীর দিন কাটে খুবই কষ্টে

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নূর নবীর গানে সবাই মুগ্ধ হলেও তার দিন কাটে খুবই কষ্টে

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিল্পী নূর নবী
সর্বমোট পঠিত : 198 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

অনেক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মাইকিং করে কিছু উপার্জন হয়। চোখে না দেখলেও অন্যের কাছে দু এক বার শুনেই তা মুখস্ত হয় নূর নবীর। আর এতেই শুরু করে মাইকিং। গানও শিখেছে একইভাবে। শুনে শুনে তার শেখা।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ১৪খানা গ্রাম। যে গ্রামে যাওয়ার জন্য নেই কোন ভালো রাস্তা। অনেক কষ্টেই ১৪খান গ্রামে গিয়ে খোঁজ মিলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নূর নবীর। তার বাবার ৪ ছেলের মধ্যে সে সবার ছোট। বাবা একজন গরিব ও ক্ষুদ্র কৃষক। ৪ ছেলের মধ্যে ৩ ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। তারাও অনেক কষ্টে দিন চালাচ্ছে দারিদ্রতার কারণে।

নুর নবীর বৃদ্ধ বাবা লুৎফর মিয়ার (৭০) কাঁধে এখনো রয়েছে স্ত্রী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নূর নবী, নূর নবীর স্ত্রী ও ৪ বছরের কন্যা সন্তান নাদিয়া।

বাবার আয়ে সংসার চলেনা নূর নবীদের। তাই বিভিন্ন হাট-বাজার ও দোকানে গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে যে টাকা পায় তাদিয়েই কোন রকমে সংসার চলে নূর নবীদের।

অনেক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মাইকিং করে কিছু উপার্জন হয়। চোখে না দেখলেও অন্যের কাছে দু এক বার শুনেই তা মুখস্ত হয় নূর নবীর। আর এতেই শুরু করে মাইকিং। গানও শিখেছে একইভাবে। শুনে শুনে তার শেখা।

নূর নবীর মা রাহেলা খাতুন (৬০) জানান, ছেলেকে মাদ্রাসায় দিছিলাম। কিন্তু অন্ধ হওয়ায় সেখানে তাকে পড়ানো সম্ভব হয়নি। ভায়াডাঙ্গা প্রতিবন্ধী স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করাইছি। আমি বুড়া অইয়া গেছি তাই তারে এডা বিয়া করাইছি। যাতে তার দেখবাল করতে পারে। এতোদিন গান গেয়ে প্রচার করে কিছু টেহা পাইতো, এতে আমাগো সংসার চলতো। এহন করোনার কারণে সেডাও বন্ধ। এহন তো আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি।  

এইতো হলো নূর নবীর পারিবারিক গল্প, এবার জানাযাক তার সম্পর্কে, নূরনবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও তার রয়েছে অনেক মেধা। যা সে ২/১বার শুনে তাই তার মুখস্ত হয়ে যায়। অনেক গানই তার জানা আছে। নিজেও লিখেছেন অনেক গান। তার কন্ঠও খুব সুন্দর।

একটি পাতিল বা বউল বাজিয়ে চমৎকার কন্ঠে গান গায় সে। তার গান শুনে মুগ্ধ হয় মানুষ। গান শুনে তাকে ৫ টাকা থেকে ৫০০/১০০০ টাকা পর্যন্ত দান করেন অনেকেই। তবে নূর নবী ভিক্ষা করে না। খুশি হয়ে যে যা দেয় তাতেই সে খুশি। এলাকার নানা অনুষ্ঠানেও তাকে ডাকা হয় গান গাওয়ার জন্য। আবার সে প্রচারও করে ভালো। গান গেয়ে আর প্রচার করে যা পায় তা দিয়েই চলে ওদের সংসার।

মো. নূর নবী জানান, আমি জন্ম অন্ধ। আমি দুচোখ দিয়ে কিছু দেখিনা। তবে অনুভব করতে পারি। একবার কারোর কন্ঠ শুনলে তাকে আর পরে চিনতে অসুবিধা হয় না। কোন রাস্তা দু একবার দেখাইয়া দিলে তাও চেনা হয় আমার। তবে আমার কষ্ট আমি এ পৃথিবিটা দেখতে পাই না। আমি ভিক্সা চাই না। অন্যের সহযোগিতা ও দোয়া চাই। বিশেষ করে প্রভাসে যারা থাকেন তাদের ও বিত্তবানদের কাছে আমি সহযোগিতা চাই।

সে আরো জানায়, আমি প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। কিন্তু চেয়ারম্যান মেম্বাররা আমাকে আর কোন সহায়তা দেননা। আর আমি একজন বড় শিল্পী হতে চাই। গান গেয়েই মানুষের মন জয় করতে চাই।     

তার স্ত্রী আল্পনা জানান, আমি আমার অন্ধ স্বামীর সেবাযত্ন করতে পেরে খুব খুশি। আমার মনে কষ্ট নেই। তবে আমার স্বপ্ন আমার স্বামী যদি কোনদিন চোখে দেখতে পারতো।

স্থানীয় এলাকাবাসী জহুরুল হক বলেন, নূর নবীর গান আমাদের কাছে খুব ভালো লাগে। তাই তার গান শুনে আমরা কিছু কিছু করে টাকা পয়সা দেই।  

তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা গরিব আমরা তো আমাগো সংসারই চালাবার পাইতাছি না। না হলে নূর নবীর জন্য কোনো-না-কোনো ব্যবস্থা করতাম। আমাদের চেয়ারম্যান কোন কিছু দিয়ে সহযোগিতা করে না।

শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান হামিদুল্লাহ তালুকদার বলেন, নূর নবী সমাজসেবা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। এছাড়াও আমার কাছে কোনো অনুদান এলে আমি তার বাবাকে জানাই।

উপজেলা চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা তার খোঁজ খবর রাখছি। সে আমাদের উপজেলায় আসলে আমরা তাকে নানা সময় সহযোগিতা করি। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে আমরা ডেকে আনি। তাকে সহায়তাও করি।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি