শেরপুরে ভিক্ষুকদের নিয়ে পিকনিক

শেরপুরে ভিক্ষুকদের নিয়ে পিকনিক
সর্বমোট পঠিত : 201 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

আমরা ‘ক’ জন সংগঠনের তরুণ উদ্যোক্তা রিজভী আহমেদ বলেন, আজ শেরপুর জেলার সদরের বাজিতখিলা ইউনিয়নের আমরা ‘ক’ জন এর ব্যানারে স্থানীয় গোল্ডেন ভ্যালী পার্কে ভিক্ষুকদের “ভিক্ষা বিলাস নামের পিকনিক” অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। সর্ব প্রথম ভিক্ষুকদের নিয়ে পিকনিক করার পরামর্শ আমার মাথায় আসে। এমন আয়োজন করতে পেরে আমাও খুবই আনন্দিত।

প্রতিদিনই ভিক্ষা করে বেড়াতে হয় ভিক্ষুকদের। তারা ভালো খাবার বা আনন্দ করতে পারে না। তাই তাদের মনের খোরাক মেটাতে আনন্দে মেতে উঠেছিলো শেরপুর জেলার ভিক্ষুকরা। ব্যতিক্রমী এক আয়োজনে পিকনিক করে তারা।

রাত পোহালেই ভিক্ষার থলে আর থালা বাটি নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হয় ভিক্ষুকরা। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় আর ভিক্ষা করে দিন কাটায় ওরা। ভালো খাবার কমই জুটে তাদের ভাগ্যে। আর নানা সময় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আনন্দে ফুর্তিতে মেতে উঠলেও ভিক্ষুকদের তাও করা সম্ভব হয় না। মনে হয় তারা যেন অন্য জগতের মানুষ। এ অবস্থায় শেরপুর জেলার ভিক্ষুকরা বিলাসবহুল স্থানীয় গোল্ডেন ভ্যালী পার্কে মেতে ওঠে ব্যতিক্রমী এক পিকনিকে। আজ পেয়েছিলো একটু আনন্দের সুযোগ। ভিক্ষার পাশাপাশি আনন্দ করতে জানে তারা।

২২ মার্চ (মঙ্গলবার) শেরপুরে ভিক্ষুকদের নিয়ে ভিন্ন রকম এক পিকনিকের আয়োজন করেছিলো আমরা “ক” জন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন।  আর এ পিকনিকের নাম দেওয়া হয় “ভিক্ষা বিলাস”। পিকনিকে অর্ধশতাধিক ভিক্ষুক নিয়ে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। অনুষ্ঠানে ভিক্ষুকদের নিয়ে নানান খেলার আয়োজন করা হয়। মহিলা ভিক্ষুকদের বালিশ খেলা দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হলেও হাড়ি ভাংগা ও নিজস্ব প্রতিভা প্রকাশ ইত্যাদি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমাপ্ত করা হয়। দুপুরে সকল ভিক্ষুকদের নিয়ে একসাথে সবাই বাহারি রকম খাবার পরিবেশন করেন। খাওয়া দাওয়া শেষে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদেরকে পুরষ্কার প্রদান, করোনো সুরক্ষায় মাক্স ও যাতায়াত বাবদ নগদ কিছু অর্থ প্রদান করা হয়।

পিকনিকে আসা আব্দুর রহমান নামের এক ভিক্ষুক বলেন, আমরা বাবা আজকা সবাই মিইলা মেলা মজা করলাম। আর ভালা খাবারও খাইলাম। আমরা এতে মেলা খুশি।

ভিক্ষুক মো: জসিম মিয়া বলেন, আমরা অটো গাড়িত কইরা পিকনিকে আইলাম। ভালা ভালা খাওয়াও খাইলাম। খেলা ধুলা ও গান বাজনার করলাম। আমরা যে এদিন ভিক্ষুক তা ভুইলাই গিয়েছিলাম।

মোছা: সাফিয়া বেগম বলেন, আজকা এনো আইয়া খুব মজা করলাম। গান বাজনা করলাম। মেলা খেলা খেললাম। বাবাজিরা আমগরে মেলা আনন্দ দিছে। আমগরে মেলা মানুষ দুর দুর করে আর এরা আমগরে বুকে টাইন্না নিছে। আল্লাহ এগরে বালা করুক।

স্থানীয় মো: মোবারক বলেন, আমি এই প্রথম দেখলাম ভিক্ষুকগর পিকনিক। আমরা চাই এই আয়োজন প্রতিবছর করা হোক।

আমরা ‘ক’ জন  সংগঠনের তরুণ উদ্যোক্তা রিজভী আহমেদ বলেন, আজ শেরপুর জেলার সদরের বাজিতখিলা ইউনিয়নের আমরা ‘ক’ জন এর ব্যানারে স্থানীয় গোল্ডেন ভ্যালী পার্কে ভিক্ষুকদের “ভিক্ষা বিলাস নামের পিকনিক” অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। সর্ব প্রথম ভিক্ষুকদের নিয়ে পিকনিক করার পরামর্শ আমার মাথায় আসে। এমন আয়োজন করতে পেরে আমাও খুবই আনন্দিত।
সংগঠনের কায়ছার মাহমুদ রাজু বলেন,  আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভিক্ষুকদের যথেষ্ট আনন্দ দেওয়া চেষ্টা করেছি। আমরা চাই আমাদের মত যারা আছেন, আপনারাও ভিক্ষুকদের পাশে এসে দাড়ান। ভিক্ষাকে না বলুন ভিক্ষুককে নয়। কারণ ভিক্ষা না দিলে ভিক্ষুকরা কিভাবে বাঁচবে। সকলের কাছে অনুরোধ আপনারাও এই অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়ান।

যারা শুধু ভিক্ষা করে থাকে। তাদেরও মনে স্বাধ জাগে, ভালো কিছু খাবার আর মনের আনন্দ উপভোগ করতে। এমন আয়োজনে ভিক্ষুকদের খুশি দেখে আয়োজকরা প্রতি বছর এ আয়োজন অব্যহত রাখার কথা জানিয়েছেন। এমন আয়োজন প্রশাসনের বা সমাজের বিত্তবানদের পক্ষ থেকেও নেয়া প্রয়োজন মনে করেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি