টিকা কেনায় অনিয়মের অভিযোগ টিআইবির

টিকা কেনায় অনিয়মের অভিযোগ টিআইবির
সর্বমোট পঠিত : 304 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কেনায় নানা ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দেশে করোনা মোকাবিলায় ৩৬ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ সংস্থাটির। ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব অভিযোগ করে টিআইবি। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় মঙ্গলবার। ।

এ উপলক্ষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে যুক্ত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। সংস্থাটির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন।


চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে গবেষণাপত্র তৈরি করা হয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপযোগিতা যাচাই না করে হাসপাতাল নির্মাণ ও তার যথাযথ ব্যবহার না করে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ার ক্ষেত্রে ৩১ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়।


টিআইবির ভাষ্য, করোনার সময়ে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্য, বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত ছিল।


টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, করোনাভাইরাসের টিকা কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। টিকা ক্রয় পরিকল্পনা ও চুক্তি সম্পাদন নোটিশ সিপিটিইউ (সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।


সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, একটি উৎস থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাপে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি উৎস ছাড়া বিকল্প উৎস অনুসন্ধানে উদ্যোগের ঘাটতি লক্ষ করা গেছে।


ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে সরকার যে চুক্তি করেছে, তার অংশীদার বেক্সিমকো ফার্মা। চুক্তি অনুযায়ী তারাই টিকা নিয়ে আসবে দেশে। পরিবহনের পাশাপাশি দেশে সংরক্ষণের দায়িত্বও তাদের।


অর্থও পরিশোধ করবে প্রতিষ্ঠানটি। পরে সরকার বেক্সিমকোকে দেবে টাকা।


সিরাম থেকে ৩ কোটি টিকা আনতে গত বছরের ৫ নভেম্বর হয় সমঝোতা স্মারক। ১৩ ডিসেম্বর হয় ক্রয়চুক্তি। পরে টিকার সংখ্যাটা আরও ৪০ লাখ বাড়ানো হয়।


টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩.৮ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা ও সে অনুযায়ী টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি লক্ষ করা যায়। বিভিন্ন পেশা বা জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি, তাদের টিকার আওতায় নিয়ে আসার প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় নিরূপণ না করার কারণে টিকাবিষয়ক ভ্রান্ত ধারণা, টিকা নিতে ভীতি ও অনাগ্রহ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি টিকার আওতার বাইরে রয়ে গিয়েছে।


গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জরিপে দেখা গেছে ৫০.২ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি। ৫৬.২ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে টিকা দেয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হয়নি। এ ছাড়া টিকাগ্রহীতার অসুস্থতার বিষয়গুলো যাচাই করা হয়নি।


সাংবাদিকদের নামে মামলা


টিআইবির ভাষ্য, করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ৮৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে এ বিষয়ে লেখালেখির জন্য। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত উদ্যোগের ঘাটতির কারণে করোনার সংক্রমণ ফের বেড়েছে।


গবেষণা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ও পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত না নেয়া, নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা বিতরণে যথাযথ উদ্যোগের ঘাটতিসহ সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।


পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও সুশাসনের ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। আইনের লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানির মাধ্যমে জনগণের টাকা থেকে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।


গবেষণা প্রতিবেদনে টিকার বিষয়ে সুপারিশ


১. দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে কত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করতে হবে।


২. সম্ভাব্য সব উৎস থেকে টিকাপ্রাপ্তির জন্য জোর কূটনৈতিক তৎপরতা জারি রাখতে হবে।


৩. উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের সুযোগ দিতে হবে।


৪. সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি দিতে হবে।


৫. রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ছাড়া টিকা ক্রয়চুক্তি সম্পর্কিত সব তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।


৬. পেশা, জনগোষ্ঠী ও এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের ঝুঁকি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সমভাবে বিবেচনা করে অগ্রাধিকার তালিকা থেকে যারা বাদ পড়ে যাচ্ছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।


৭. সুবিধাবঞ্চিত ও প্রত্যন্ত এলাকা বিবেচনা করে টিকার নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও টিকাদান কার্যক্রম সংস্কার করতে হবে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন ও তৃণমূল পর্যায়ে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।


৮. সব কারিগরি ত্রুটি দূর করাসহ সবার জন্য বিভিন্ন উপায়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এসএমএসের মাধ্যমে, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সবার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করার নিয়ম বাতিল করতে হবে।


৯. এলাকাভিত্তিক চাহিদা যাচাই করে টিকা সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।


১০. টিকাদান কার্যক্রমে যুক্ত কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।


১১. টিকাকেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যমান সমস্যা দূর করার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি