মহানবী (সা.) যেভাবে মুসাফাহা করতেন

সর্বমোট পঠিত : 78 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

করমর্দন বা মুসাফাহা ইসলামের দৃষ্টিতে সুন্নত। এটি কুশলবিনিময়ের ইসলামী পদ্ধতি। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে মুসাফাহার মাধ্যমে কুশলবিনিময়ের শিক্ষা দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, কোনো একসময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কোনো ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বলেন, না।

করমর্দন বা মুসাফাহা ইসলামের দৃষ্টিতে সুন্নত। এটি কুশলবিনিময়ের ইসলামী পদ্ধতি। নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে মুসাফাহার মাধ্যমে কুশলবিনিময়ের শিক্ষা দিয়েছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, কোনো একসময় জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের কোনো ব্যক্তি তার ভাই কিংবা বন্ধুর সঙ্গে দেখা করলে সে কি তার সামনে ঝুঁকে (নত) যাবে? তিনি বলেন, না।


সে আবার প্রশ্ন করল, তাহলে কি সে গলাগলি করে তাকে চুমু খাবে? তিনি বলেন, না। সে এবার বলল, তাহলে সে তার হাত ধরে মুসাফাহা (করমর্দন) করবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭২৮)

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) নিজেও কারো সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে করমর্দন করতেন এবং তার জন্য দোয়া করতেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৭)

নবীজি (সা.)-এর এই সুন্নতের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। সাবিত আল-বুনানি (রহ.) বলেন, নবীজির সাহাবি আনাস (রা.) সকালবেলা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মুসাফাহা (করমর্দন) করার জন্য তার হাতে সুগন্ধি তেল মাখতেন। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০২২)

এর কারণ হলো মুসাফাহা একটি ফজিলতপূর্ণ আমল। এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পরস্পর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। বান্দার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১২)

মুসাফাহার নিয়ম : ইসলামে মুসাফাহার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়ম মেনে যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসাফাহা করে তাহলে তার সগিরা গুনাহ ঝরে যায় বলে বিভিন্ন হাদিসে আছে। অনেকে মনে করেন, মুসাফাহার সময় হাতে হালকা চাপ দিতে হয়। এ রকম নিয়ম কোনো কিতাবে নেই।

হাত হালকা ঝাড়া দেওয়ার কথা কোনো কোনো কিতাবে থাকলেও তা নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে পাওয়া যায় না। মুসাফাহার সুন্নত পদ্ধতি হলো প্রথমে সালাম দেওয়া, তারপর উভয় হাতে মুসাফাহা করা।

অনেকে মনে করেন, মুসাফাহার পর নিজের হাতটি এনে নিজের বুকে লাগাতে হয়। শরিয়তে এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। তাই তা থেকে বিরত থাকা উচিত। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত, হাদিস : ১২/১১৯-১২০)

মুসাফাহার দোয়া : মুসাফাহার অন্যতম অংশ হলো মুসাফাহা করার সময় একে অপরের জন্য দোয়া করা। এটি আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর আমল। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখনই তাঁর সাহাবিদের কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তাঁর সঙ্গে মুসাফাহা করতেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করতেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৭)।

তাই মুসাফাহার সময় ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম’ পড়ে, একে অপরের জন্য দোয়া করা যেতে পারে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১২/১২১)

পরনারীর সঙ্গে মুসাফাহা : ইসলামের দৃষ্টিতে বেগানা নারীর সঙ্গে মুসাফাহা বা হ্যান্ডশেক করা জায়েজ নেই। আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না’—এ আয়াত পাঠ করে স্ত্রীলোকদের কাছ থেকে বায়আত নিতেন। তিনি আরো বলেন, যাদের হাতে হাত দেওয়া বৈধ এমন মহিলা বাদে রাসুল (সা.)-এর হাত অন্য কোনো মহিলার হাত স্পর্শ করেনি। (বুখারি, হাদিস : ৭২১৪)

বিদায়কালে মুসাফাহা : বিদায়কালে মুসাফাহা সম্পর্কে কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামের মতানৈক্য থাকলেও বেশির ভাগ ওলামায়ে কেরামের মতে বিদায়ের সময়ও সালামের মতো মুসাফাহা করার প্রমাণ পাওয়া যায়। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১২/১২৪)

ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো লোককে নবী (সা.) বিদায় দেওয়ার সময় তাকে নিজের হাতে ধরতেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের হাত নবী (সা.) থেকে না ছাড়াতেন সে পর্যন্ত তিনিও তার হাত ছাড়তেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪২)

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি