বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ের বারমারী সাধু লিওর খ্রীষ্টান ধর্মপল্লীতে পূণর্মিলন, পাপ স্বীকার এবং বিকেলে পবিত্র খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে রাতে আলোক শোভাযাত্রা, আরাধনা, ব্যক্তিগত প্রার্থনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরন আজ ১ নভেম্বর সকালে জীবন্ত কুশের পথ ও মহা খ্রীষ্টযাগের মধ্যদিয়ে শেষ হয় দুই দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
মোমের আলোয় আলোকিত গারো পাহাড়ের কোল
মোমের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ী এলাকা। পাহাড়ের পাহাড়ের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার রাতের আধার দূর হয়ে যায় মোমবাতির আলোয়। জেলার নালিতাবাড়ীর বারমারী সাধু লিওর খ্রীষ্টান ধর্মপল্লীতে অনুষ্ঠিত দুইদিনব্যাপি ফাতেমা রাণীর র্তীথ উৎসবের প্রথম দিন রাত আটটার সময় নয়নকাড়া আলোর মিছিলে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়। ৩১ অক্টোবর দুপুরে শুরু হয়ে ১ নভেম্বর দুপুরে মহা খ্রীষ্টযাগের (মূলপ্রার্থনা) মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ র্তীথ উৎসব। ‘প্রার্থনায় প্রেরণায় ফাতেমা রানী মা মারিয়া’, ‘যে পরিবার একত্রে প্রার্থনা করে, সে পরিবার একত্রে থাকে’—এই মূল সুরে তীর্থ উৎসবে যোগ দেন প্রায় ৩০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক খ্রীষ্টভক্ত। এখানের মূল আকর্ষন আলোর শোভাযাত্রা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর গারো পাহাড়ের বারমারী সাধু লিওর খ্রীষ্টান ধর্মপল্লীতে পূণর্মিলন, পাপ স্বীকার এবং বিকেলে পবিত্র খ্রীষ্টযাগের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তীর্থ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে রাতে আলোক শোভাযাত্রা, আরাধনা, ব্যক্তিগত প্রার্থনা, নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরন আজ ১ নভেম্বর সকালে জীবন্ত কুশের পথ ও মহা খ্রীষ্টযাগের মধ্যদিয়ে শেষ হয় দুই দিনের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা খ্রীষ্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোম জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশগ্রহন করেন। এসময় প্রায় ৪ কিলোমিটার পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম শেষে মা-মারিয়ার প্রতিকৃতির সামনে সমবেত হয়ে ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে অকৃপন সাহায্য এবং নিজেদের মনের বাসনা পূরণ, ভাল ফলাফল ও লেখাপড়া সহজ করতে প্রার্থনা করেন ক্যাথলিক ভক্তরা।
এ উপলক্ষে এখানে বসে একটি মেলা। এতে প্রতিবছরের মতো বেচা-কেনা করেন ব্যবসায়ীরা।
মায়া নকরেক বলেন, এখানে মা মারিয়ার কাছে আসি প্রার্থনা করতে, মনের বিভিন্ন ইচ্ছা বাসনা জানাতে। যাতে সেগুলো পুরণ হয়।
আমি এখানে এসেছি আমার সন্তান, স্বামী, পরিবারের জন্য প্রার্থনা করার জন্য। আমি মা মারিয়ার কাছে আসছি আমি যেন ভাল করে লেখা পড়া করতে পারি, আমার রেজাল্ট যেন ভালো হয়। হেমারসন বলেন, এই জায়গাটা একটি তীর্থ স্থান, এখানে আমরা প্রতি বছর আসি, প্রার্থনা করা জন্য। এখানে আমাদের মা আছেন, মায়ের কাছে আমাদের চাওয়া গুলো মায়ের কাছে জানাই, মা যেনো আমাদের চাওয়া গুলো পূর্ণ করে দেন। গীর্জার মাধ্যমে, আলোর শোভাযাত্রার মাধ্যমে প্রার্থনা করি।প্রতি বছর অক্টোবরের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার তীর্থ উৎসব হয়। এই দিনটাতে আমরা এখানে মা মারিয়ার কাছে আসি। আমাদের পরিবারের জন্য, আমরা যেহেতু স্টুডেন্ট, তাই আমাদের সামনে চলার পথ যেন আরো সহজ হয় সে জন্যই আসি।
চিসিম সিরাম বলেন, আমরা এখানে আসি মা মারিয়ার কাছে অনেক কিছু পাই। আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করি। আমার একটি মানত ছিলো সে কারণেই এখানে আসছি, আমার মেয়েটার অসুখ, এজন্য আখানে আসা, আমার মেয়েটা যাতে ভালো হয়ে যায়। আমি এখানে নিজের ইচ্ছে যাতে পুরণ হয় আর মানুষের জন্য প্রার্থনা করতে আসছি।
ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাজ গোমেজ বলেন, এবারের তীর্থযাত্রায় বিশ্ব মানবতার কল্যাণে বিশেষ করে বাংলাদেশের সকল সমস্যার সমাধানের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তীর্থ উৎসব সম্পন্ন করার জন্য নেওয়া হয় চার স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিলো বারোমারী খ্রিষ্টান মশিনারী এলাকায়। শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পেরেছি, এজন্য যারা করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য শেরপুরের ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরনে ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয়। সেই থেকেই ফাতেমা রাণীর করুণা ও দয়া লাভের আশায় সারাদশের এবং দেশের বাইরের তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হয় নিজেদের মনোবাসনা পুরণ ও পাপ মোচনের জন্য।
মন্তব্য