অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুইপ আতিক বলেন, আমরা অনেকে ১৯৭১ সালের (২৪ নভেম্বর) সূর্যদী গণহত্যার কথা ভুলে গেছি। কিন্তু শেরপুরের পুলিশ সুপার এসে মুক্তিযুদ্ধে সূর্যদী গণহত্যার বিষয় গুলো স্মরণ করে এবং মনে প্রাণে দিবসটি লালন করেছেন।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর মঞ্চস্থ হলো ‘সূর্যদীর গল্প’
স্বাধীনতার ৫২ বছর পর সদরের সূর্যদী গণহত্যার ঘটনা অবলম্বনে মঞ্চস্থ হলো ‘সূর্যদীর গল্প’। তরুণ প্রজন্মকে একাত্তরের চেতনায় অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যেই এ নাটক।
শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় জেলা পুলিশ শেরপুর কর্তৃক রচিত শেরপুরের ঐতিহাসিক 'সূর্যদী গণহত্যা' বিষয়ক নাটক "সূর্যদীর গল্প" মঞ্চায়িত হলো সূর্যদী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে।
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক, এমপি।
এসময় ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ডেন্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতাকর্মীবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সর্বস্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুইপ আতিক বলেন, আমরা অনেকে ১৯৭১ সালের (২৪ নভেম্বর) সূর্যদী গণহত্যার কথা ভুলে গেছি। কিন্তু শেরপুরের পুলিশ সুপার এসে মুক্তিযুদ্ধে সূর্যদী গণহত্যার বিষয় গুলো স্মরণ করে এবং মনে প্রাণে দিবসটি লালন করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা সবাই যদি শহীদদের পরিবারকে সম্মান করি আমি মনে করি যুদ্ধাহত পরিবারগুলো অনেক সম্মানিত হয় এবং তাদের অতীতের হারানো ব্যথাগুলো ভুলে যায়। এতদিন মানুষ শুধু এই সূর্যদীর গণহত্যা সম্পর্কে শুনেছেন কিন্তু আজ পুলিশ সুপারের গবেষণা ও সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে যে নাটকটি আমরা দেখলাম এটি দেখার পর আমরা কিছুক্ষণের জন্য সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ফিরে গিয়েছিলাম। তরুন প্রজন্ম এই মঞ্চায়নটা দেখে আমি মনে করি তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম’র গবেষণা ও সার্বিক তত্বাবধানে নাটকটির রচনা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহম্মেদ পিপিএম ও শেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া।
স্থানীয় রাজাকারদের নির্দেশে ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর সকাল ৮টায় শেরপুর সদরের সূর্যদী গ্রামে পাক হানাদার বাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে গ্রামটিতে। সেদিন গ্রামবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাক বাহিনীরা ছুঁড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। এসময় হত্যা করা হয় ৪৯জন নিরীহ মানুষকে, পুড়িয়ে দেয় ২শ ঘর-বাড়ি। সেদিনের ঘটনা অবলম্বনে সূর্যদী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শনিবার রাতে মঞ্চস্থ হলো ‘সূর্যদীর গল্প’। তাই নাটকটি দেখতে ভিড় ছিলো কয়েক হাজার নারী-পুরুষদের।
অভিনয় শিল্পী তপন সারোয়ার, গোলাম মোস্তফা, রজত সাহা অন্ত, পূজা পালসহ অন্যান্যরা জানায়, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে হলেও এমন উদ্যোকে স্বাগত জানাচ্ছি। আর মহান মুক্তিযুদ্ধের নাটকে অংশ নিতে পেরে গর্বিত আমরা ।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম জনউদ্যোগের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, হানাদের দ্বারা সংগঠিত গণহত্যা, প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং শেষে বিজয় এমন নানা ঘটনা ছাড়াও ৪৭’র দেশ ভাগ, ৫২’র ভাষা আন্দোলন এবং ৬দফা আন্দোলনের চিত্র ফুটে উঠেছে এ নাটকে। সুশীল সমাজের নাগরিকরা আরও জানায়, নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এমন আয়োজন বড় বেশি দরকার।
নাটকটির রচয়িতা ও নির্দেশক শেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শিব শংকর কারুয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে এই উদ্যোগ সহায়ক হবে। নতুন প্রজন্ম এ নাটক থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, ঘটনা অবগত হতে পারবে। দেশপ্রেমে তারা আরও উজ্জীবিত হবে।
নাটকটির আয়োজক শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম জানান, "সূ্র্যদীর গল্প" নাটকে আফছারের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কাহিনী আমরা সারাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায়। এক আফছারের জীবনের বিনিময়ে প্রায় ৪৯ জন যারা বেঁচে গিয়েছিলেন এবং তাদের মনে যারা জীবিত আছে তাদেরকে সাথে নিয়ে আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতেই আমাদের এই আয়োজন।
পুলিশ সুপার বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এমন নাটক তরুণ প্রজন্মকে একাত্তরের চেতনায় অনুপ্রাণিত করবে। অসাম্প্রদায়িকতা দেশ গড়তে এমন নাটক ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি আগামীতেও জেলাজুড়ে ঘটে যাওয়া গনহত্যার ঘটনা নিয়ে এমন আয়োজন করা হবে।
মন্তব্য