সুন্দরবনে হরিণের মাংস জব্দ ধরা ছোয়ার বাইরে চোরাশিকারি চক্র

সর্বমোট পঠিত : 65 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকা সত্বেও সুন্দরবনে কোনভাবেই থামছে না হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা। চোরা শিকারিরা বিভিন্ন উপায়ে বনে প্রবেশ করে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে মাংস, মাথা, চামড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে।


বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকা সত্বেও সুন্দরবনে কোনভাবেই থামছে না হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা। চোরা শিকারিরা বিভিন্ন উপায়ে বনে প্রবেশ করে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে মাংস, মাথা, চামড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে।

এতে হুমকির মূখে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি চোরা শিকারিদের দীর্ঘমেয়াদী শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারী রবিবার দিবাগত রাতে চাঁদপাই রেঞ্জের পূর্ব সুন্দরবন থেকে ২০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেছে বনবিভাগের সদস্যরা। তবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। পূর্ব-সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ শাহজাহান জানান, গোড়া বাঁশতলা গ্রামের ফারুক হোসেন হাওলাদারের (৩০) নেতৃত্বে চার সদস্যের চোরা শিকারি দলকে আটক করতে সুন্দরবনের ইসহাকের চিলা নামক স্থানে অভিযান চালানো হয়। ওই সময় চোরা হরিণ শিকারিদের একটি নৌকা আটক করা হয়।

এসময় নৌকাটিতে তল্লাশি চালিয়ে হরিণের দুইটি পাসহ ২০ কেজি হরিণের মাংস, দুই হাজার ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ, একটি দা ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়।

পরে চোরা শিকারিদের আটক করতে গেলে তারা নৌকার বৈঠা দিয়ে আঘাত করে বন কর্মকর্তা শাহজাহানসহ তার সাথে থাকা অপর তিন বনপ্রহরীকে পিটিয়ে আহত করে দ্রুত পালিয়ে যায়।

এতে স্টেশন কর্মকর্তা মো. শাহজাহানসহ তিন বনপ্রহরী আঘাতপ্রাপ্ত হন। ফলে চোরা শিকারিদের কাউকেই আটক করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনার পর থেকে ওই চোরা শিকারিদের আটকের জন্য বনবিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, হরিণ শিকারিদের হামলায় আহত তিনিসহ চারজন কচুবুনিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় সি-বন মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

একইদিনে মাছ ধরার পাশ নিয়ে হরিণ শিকার করে লোকালয়ে আনার সময় তা হাতেনাতে আটক করেছেন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী বনস্টেশন অফিসের সদস্যরা। রবিবার দুপুর ১টার দিকে বুড়িগোয়ালিনী বনস্টেশনের কর্মকর্তা হাবিবুল ইসলামের নেতৃত্বে বনকর্মীরা সুন্দরবনের ছোটকলাগাছিয়া নদী সংলগ্ন পশুরতলা নামক স্থান হতে ৩০ কেজি হরিণের মাংস, ৪টি হরিণের পা, হরিণ ধরার ফাঁদ, মাছ ধরার পাশ(পারমিট) ও ১টি নৌকাসহ আনুসঙ্গিক মালামাল জব্দ করে। তবে বনকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিন হরিণ শিকারি দ্রুত সুন্দরবনে পালিয়ে যান।

সুন্দরবন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা বলেন, সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়ত হরিণ শিকারের কারণে সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। অচিরেই যদি হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা যায় তাহলে অন্য অনেক প্রাণির মতো এই বন থেকে হরিণও বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলার গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম মামুনুর রহমান বলেন, সুন্দরবনের ৪ ভাগের ৩ ভাগই কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের এখতিয়ারভুক্ত এলাকা। ১২ টি স্টেশন ও দুটি আউটপোস্টের মাধ্যমে সুন্দরবনের নদী-খাল ও বিভিন্ন স্থাপনায় কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল চলে। হরিণসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণী সুরক্ষার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী হত্যায় যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে কোস্টগার্ড।

বনকর্মকর্তাদের দাবি, হরিণ শিকার আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে গেছে। র‌্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের নিয়মিত টহলের কারণে হরিণ শিকারের সুযোগ কম। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সেটা আগের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি