আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘর, পলিথিন দিয়ে বৃষ্টি ঠেকানোর চেষ্টা

সর্বমোট পঠিত : 152 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

মাদারীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বলেন, এই মুহূর্তে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো অবশ্যই মেরামত করা হবে।


মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের চরগোবিন্দপুর এলাকায় রাস্তার পাশে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে ৪০টি পরিবার। সংস্কারের অভাবে ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।তারপরও মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে বৃষ্টির দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় বাসিন্দাদের। পাশাপাশি পরিত্যক্ত ঘরে জমে উঠেছে মাদক ও জুয়ার আড্ডা। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে প্রকল্পের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার খোয়াজপুর ইউনিয়নের চরগোবিন্দপুর গ্রামে রাস্তার পূর্ব পাশের পাড়ঘেঁষে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে। যেখানে ভূমিহীন, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় পরিবার বসবাসের সুযোগ পায়। কিন্তু বর্তমানে ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

দেখা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের পাকা মেঝে ভেঙে গেছে। টিনের চালায় মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। লোহার সরঞ্জামেও মরিচা ধরেছে। একটু বৃষ্টি হলেই চুইয়ে পানি পড়ে। ঘরের বেড়া ও দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ভাঙাচোরা ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে কোনো রকম বসবাস করছেন বাসিন্দারা। রাতে বৃষ্টি হলে মাথায় পলিথিন দিয়ে ভাঙা ঘরের কোণে বসে নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। গোসলখানা, টয়লেট ও টিউবওয়েল ভেঙে গেছে। নেই চিকিৎসা ও বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আটটি টিউবওয়েল মধ্যে একটি সচল আছে। ১২টি শৌচাগারের মধ্যে কোনোটিই ব্যবহারের উপযোগী নয়। শুরুর দিকে ৮০টি পরিবার বসবাস করলেও বর্তমানে ৪০টি পরিবার বসবাস করছে। কেউ কেউ স্থানীয়দের ভয় চলে গেছে। আবার কেউ ঘরের অবস্থা খারাপ দেখে অন্য জায়গায় চলে গেছে। রাত হলে শুরু হয় পরিত্যক্ত ঘরের ভেতরে মাদক সেবন ও জুয়া খেলার আড্ডা। কিছু বললেই সরকারি ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হুমকি দেওয়া হয়।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারীরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে একটি সমবায় সমিতির ঘর দেওয়া হয়েছে, সেখানে স্থানীয়রা কৃষি মালামাল রাখত। এই সমবায় সমিতিতে ভূমিহীন ও অসহায় পরিবারের ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করত। ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করায় স্থানীয়দের কৃষিপণ্য রাখতে অসুবিধার কারণে এই সমবায় সমিতির ঘরটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা নুরি বেগম বলেন, আমি শহরের মানুষের বাড়ি কাম করি। আমার জামাই রিকশা চালায়। আমাদের জমিজমা না থাকায় আমরা সরকারি ঘরে আইসা থাকি। এরপর বৃষ্টিতে ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। পলিথিন টাঙিয়ে রাতযাপন করতে হয়, ঘুম আসে না।

বৃদ্ধ হালিমা বেগম বলেন, আমার বয়স ৭০ বছর। আমি সরকারের ঘরেই থাকি স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে। ছেলে আছে তবে সে আমায় দেখে না।

আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, এক সময় অন্যের বাড়ি কাজ করতাম। বয়স হওয়ায় এখন আর কাজ মেলে না। মানুষের সাহায্যে এখন কোনো রকম টিকে আছি। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই ভাঙা ঘরেই বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।

আকলিমা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, মাইনসের জমিতে কাজ করে যা টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। কেউ আমায় সাহায্য করে না। চেয়ারম্যান-মেম্বার আসে শুধু ভোটের সময়। রাতে বৃষ্টি এলে বসে থাকতে হয় পলিথিন বিছিয়ে। এখন কেউ খোঁজ নেয় না।

খাদিজা জানান, তার স্বামী শহরের একটি ভাতের হোটেলে কাজ করে। অনেকেই ভাঙা ঘরের ছবি তুলে নিয়ে যায়। পরে আর আসে না।

খোয়াজপুর ইউনিয়নের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, আমরা ইউএনও ও ডিসি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ঘরগুলো মেরামতের জন্য। আর্থিক সাহায্যের কথা জানতে চাইলে বলেন, তাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।

খোয়াজপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন মোল্লা বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে ইউএনও এবং ডিসি স্যারকে অবগত করেছি। তারা আশ্বাসও দিয়েছেন বরাদ্দ হলে ঘরগুলো মেরামত করে দেবেন। কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

মাদারীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন বলেন, এই মুহূর্তে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো অবশ্যই মেরামত করা হবে।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি