নির্বাচনে কেউ না এলেও সংবিধান বসে থাকবে না

সর্বমোট পঠিত : 82 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে সব দল আসুক। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে, সেটা সেই দলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার জন্য সংবিধান তো বন্ধ করে রাখতে পারি না।


আগামী জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ চায় নির্বাচনে সব দল আসুক। কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নিলে, সেটা সেই দলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু তার জন্য সংবিধান তো বন্ধ করে রাখতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের সময় কোন দল কোন জোটে থাকবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবে- সেটাই তাঁর বিশ্বাস।

গতকাল বুধবার গণভবনে সদ্যসমাপ্ত ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে বাংলাদেশ কী পেয়েছে, না পেয়েছে- সেটা আপেক্ষিক ব্যাপার। তবে বাংলাদেশ শূন্য হাতে ফেরেনি। যাঁরা এই সফর নিয়ে ৩সমালোচনা করছেন, তাঁরা ভারত থেকে কী এনেছেন- সেটাই প্রশ্ন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সে দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। এই সফরকালে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ সাতটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সফর শেষে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

এই সফরের বিস্তারিত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই গতকালের সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের প্রাপ্তি ও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়ন ছাড়াও দেশের সমসাময়িক রাজনীতি, আগামী জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির আন্দোলন, রোহিঙ্গা সংকট এবং করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। এসব প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেওয়ার পাশাপাশি কখনও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাস্যরসিকতায় মেতে ওঠেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলন মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিভিন্ন সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেলের সম্পাদক ও কর্মাধ্যক্ষ এবং জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা ছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক, সেটাই চাই
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটাই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে, সেটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত। সেজন্য আমাদের সংবিধান তো আমরা বন্ধ করে রাখতে পারি না। সংবিধানের যে ধারা সে অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক।

আগামী নির্বাচনে ১৪ দল ও মহাজোটগতভাবে নাকি আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে অংশ নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন যখন হবে, তখন এই বিষয়ে বলতে পারব। আমরা ১৪ দল করেছি, আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু আমরা আলাদা নির্বাচন করেছি, কিন্তু আমাদের একটা সমঝোতা ছিল। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে, সেটা তো সময়ই বলে দেবে। আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগের দরজা খোলা। আর আমাদের সঙ্গে কে থাকবে না থাকবে অথবা নতুন জোট হবে অসুবিধা নেই তো!

বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এত কাজ করার পর জনগণ অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে- এটাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। জনগণ এই চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাইলে ভোট দেবে। আর না চাইলে তো কিছু করার নেই- সেটা জনগণের ইচ্ছা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে কোনো নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে পরিবর্তন হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আওয়ামী লীগ অবশ্যই যাচাই করে দেখবে কার জেতার সম্ভাবনা আছে বা কার নেই। নির্বাচনের এখনও এক বছর বাকি আছে, সময় যত যাবে ততই বিষয়টা পরিস্কার হবে।

ভারত থেকে খালি হাতে ফিরিনি
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেয়েছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কী পেলাম এই প্রশ্নটা খুব আপেক্ষিক। এটা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে, আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন। তবে মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি।

এই সফরকালে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ আরও সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সফরে তিনি ভারতের তরফে যথেষ্ট আন্তরিকতা পেয়েছেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা অন্য যাঁর যাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁদের আন্তরিকতা সব সময় ছিল, আছে। একটা বিষয়, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দলমত এক থাকে- এটা হলো বড় কথা।

আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এ নীতিই মেনে চলেছে। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করছি। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা সমাধান করা যায়।

যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনে জনগণ সাড়া না দিলে তো সেটা আমার দায়িত্ব নয়। আওয়ামী লীগ যে বিএনপির হাতে নির্যাতিত সেটা কি ভুলে গেছেন! সবাই তো আওয়ামী লীগের ওপর চড়াও হয়েছে। লাশ টানতে টানতে আর আহতদের চিকিৎসা করাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠেছিল। আজ কি সেই পরিবেশ আছে? তা তো নেই। আমাদের দলের কেউ যদি কোনো অন্যায় করে, আমরা ছেড়ে দেই না। আমার দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এজন্য কিছু বলব না? তা নয়। যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব এবং নিচ্ছি।

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন তিনি। তাঁর স্বার্থ এ দেশের মানুষ ভালো থাকুক। সমালোচনা যারা করবে, করুক না। করা তো ভালো। যত পারে কথা বলুক। ভালো কিছু এলে গ্রহণ করব। মন্দ কিছু থাকলে পরিহার করব।

সরকারের উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে গণমাধ্যমকে সেগুলো প্রকাশের উদারতা দেখানোর অনুরোধ করে তিনি বলেন, বেশি কিপ্টামি না করে যে কাজটুকু করেছি, সেগুলো একটু বলেন না ভালো করে। আমার বেলায় এত কৃপণতা কেন আপনাদের? টকশোতে টক টক কথা বলেন। টকের সঙ্গে একটু মিষ্টি না হলে আবার টেস্ট হয় না- এটাও মনে রাখবেন।

আরও অর্থ পাচারকারীর নাম আসবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ পাচারকারী এমন অনেকের তথ্য আছে- সেটা আপনারা লিখবেন কিনা সন্দেহ। আমি সোজা কথা বলি, অনেক স্বনামধন্যের তথ্য আমার কাছে আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সামনে তাদের নাম আসবে, তবে আপনারা ছাপাবেন কিনা আমি সেটা দেখব।

তিনি বলেন, অর্থ পাচারকারীর তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সরকার সুইস ব্যাংকে বহু আগে ডিমান্ড পাঠিয়েছিল, তালিকা চেয়েছিল। কিন্তু তালিকা আসেনি। সবাই হাওয়ায় কথা বলে যায়, কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য দিয়ে বলে না। মানি লন্ডারিং বন্ধে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে। ডলার সংকট বাংলাদেশের একার নয়, বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমেরিকা স্যাংশন দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার পরও বলব, করোনার সময় কোনো খরচ না থাকায় দেশের রিজার্ভ বেড়েছে। এরপর আমদানি শুরু হলে কিছু কমেছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ যেখান থেকে ঋণ নেয় সব সময় ঠিক সময় শোধ করে। বাংলাদেশ কোনো দিন ঋণখেলাপি হয়নি। এই ঋণ শোধ করতে গিয়েও রিজার্ভে একটু টান পড়ে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর তাঁর এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।

সফরের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে দু'দেশের মানুষ উপকৃত হবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দু'দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধিশালী অঞ্চলে পরিণত হবে।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি