সৈয়দপুরে শুরু হয়েছে পবিত্র আশুরার আনুষ্ঠানিকতা

সর্বমোট পঠিত : 124 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অফিসার্স কলোনি উর্দূভাষী ম্যাচ ক্যাম্পের ইমামবাড়া কমিটির খলিফা মো. মাসুদ ওয়ারসি বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা মতে আমরা সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহবান জানাচ্ছি এবং এ বিষয়ে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা তৎপর রয়েছে।


মিজানুর রহমান মিলন:
তাজিয়া তৈরী সম্পন্ন। সাজসজ্জার কাজও শেষ। সৈয়দপুর শহরের সবগুলো ইমামবাড়া আলোকমালায় সজ্জিত করা হয়েছে। ওইসব ইমামবাড়ার খলিফাসহ কমিটির সদস্যরা পার করছেন ব্যস্ত সময়।

সৈয়দপুরের বিভিন্ন বয়সী মানুষ দুলদুল ঘোড়ার সাজে পাইক বেঁধে তাদের মানত সম্পন্ন করতে গতকাল রবিবার ৮ মহররম থেকে যাচ্ছেন এ ইমামবাড়া থেকে ও ইমামবাড়ায়। তারা আবার দলবদ্ধ হয়ে শাহাদায়ে কারবালায় গিয়ে করছেন বিশেষ মোনাজাত। শহরের বিভিন্ন ইমামবাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

গত শনিবার (৭ মহররম) বিকেল থেকে শুরু হয়েছে আশুরা পালনের সকল আনুষ্ঠানিকতা। শেষ হবে আগামিকাল মঙ্গলবার (১০ মহররম)। ওইদিন পালিত হবে পবিত্র আশুরা। সারাদেশের চাইতে সৈয়দপুরে ব্যতিক্রমভাবে পালন হওয়া আশুরা উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দেশে করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে আশুরার যাবতীয় কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সৈয়দপুর কারবালা ও ইমামবাড়ার কমিটিগুলোকে। ফলে উপজেলা ও থানা প্রশাসনের নির্দেশনায় কারবালা ও ইমামবাড়া কমিটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল আশুরা উপলক্ষে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

সুত্র জানায়, মহররম মাসের চাঁদ ওঠার সাথে সাথে অবাঙ্গালী অধ্যুষিত সৈয়দপুরের ধর্মপ্রাণ মুসলিম সম্প্রদায় নানা প্রস্তুতি নেয়। ওইদিন থেকেই মানুষজন রোজা রাখাসহ মিলাদ ও ফাতিহার মাধ্যমে নানা কর্মসূচি পালন করে। তবে মহররমের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৭ তারিখ থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে এসব আনুষ্ঠানিকতা।

ওইদিন শহরের প্রায় ৪২টি ইমামবাড়াসহ কারবালায় গিয়ে শিশু থেকে শুরু করে যুবক ও বৃদ্ধরা ইমাম হোসাইনের দুলদুল ঘোড়ার সাজে শরীরে পাইক, বাদ্ধি (সুতার দড়ি ও পিতলের ঘন্টা) পরিধান করেছে। তারা চারদিন একই কাপড়ে থেকে পবিত্র আশুরার (১০ মহররম) সূর্যাস্তের আগে হাতিখানা কবরস্থান সংলগ্ন প্রতিকী শাহাদায়ে কারবালায় গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সেগুলো খুলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

এদিকে আশুরা উপলক্ষে ইমামবাড়াগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণাঢ্য সাজে। আজ সোমবার ও কাল মঙ্গলবার (৯ ও ১০ মহররম) ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, ধর্মীয় আলোচনা সভা, দুস্থদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য ও তবারক বিতরণ করবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হবে শরবত।

আশুরা উপলক্ষে কারবালা প্রান্তরসহ বিভিন্ন ইমামবাড়া এলাকায় বসছে বিভিন্ন মৌসুমি দোকানপাট যাকে বলা হয় মহররম মেলা। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য বলা হলেও তা মানছেনা কেউ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অফিসার্স কলোনি উর্দূভাষী ম্যাচ ক্যাম্পের ইমামবাড়া কমিটির খলিফা মো. মাসুদ ওয়ারসি বলেন, প্রশাসনের নির্দেশনা মতে আমরা সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য আহবান জানাচ্ছি এবং এ বিষয়ে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা তৎপর রয়েছে।

এদিকে আশুরার দিন বিকেলে শহরের পার্বতীপুর রোডের শিয়া মসজিদ কলোনী এলাকা থেকে পুলিশ প্রহরায় শিয়া সম্প্রদায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোক র‌্যালী বের করবে। ওই র‌্যালীতে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন অংশ নিবে। এদিকে আশুরার আয়োজনকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

জানতে চাইলে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আশুরা উপলক্ষে কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইমামবাড়ার কমিটির সভাপতিদের সাথে মতবিনিময় করা হয়েছে। ওই সভায় আশুরার সকল আনুষ্ঠানিকতা নিয়ম মেনে পালনের জন্য বলা হয়েছে।

ইমামবাড়ায় অনুষ্ঠানস্থলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন, আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোটা শহর ও কারবালা এলাকায় পুলিশী টহল চলছে। এছাড়া নেয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি