এমপি আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো দলের একাংশ

সৈয়দপুর জা-পায় ভাঙ্গনের সুর ॥

সর্বমোট পঠিত : 166 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেলের স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ এবং সৈয়দপুর উপজেলায় উন্নয়ন বৈষম্য ও অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে দলটির বৃহৎ একটি অংশ। এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা জাতীয় পার্টির এক সভায় সংসদ সদস্য আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

মিজানুর রমান মিলন:
সৈয়দপুর উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দলের অভ্যন্তরে ভাঙ্গনের সুর দেখা দিয়েছে।

সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেলের স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়ম বহির্ভূতভাবে কমিটি গঠনে হস্তক্ষেপ এবং সৈয়দপুর উপজেলায় উন্নয়ন বৈষম্য ও অনিয়মের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ এনেছে দলটির বৃহৎ একটি অংশ। এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা জাতীয় পার্টির এক সভায় সংসদ সদস্য আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।

ওইদিন রাতে সৈয়দপুর থানা মোড়ের দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক।

সভায় সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেলের নানা অনিয়ম, দলীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত না থেকে পদের ক্ষমতাবলে দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করাসহ অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক যথাক্রমে ফয়সাল দিদার দিপু, শফিউল আলম সুজন, পৌর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব রাকিব খান, যুগ্ম আহবায়ক শামসুদ্দিন অরুণ, জাপা নেতা ফেরাজ উদ্দিন ফেরাজ, রাইসুল ইসলাম বসুনিয়া, আলতাফ হোসেন, আবুল হাসান, শফিকুল ইসলাম সবুজ, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা যুব সংহতির সভাপতি রওশন মহানামা, পৌর যুব সংহতি সভাপতি আজহারুল ইসলাম জয়, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক পার্টি সভাপতি মনসুর আলী, রেলওয়ে জাতীয় শ্রমিক পার্টি সৈয়দপুর কারখানা শাখার সাধারন সম্পাদক গোলাম বারী প্রমুখ।

সভায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ১৩ জুলাই উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল। ওই সভায় তার উপস্থিতিতে গঠন করা হয় উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টির আহবায়ক কমিটি। এতে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক করা হয় সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক ও সদস্য সচিব করা হয় জুয়েল চৌধুরীকে।
এছাড়া পৌর কমিটির আহবায়ক জয়নাল আবেদীন ও সদস্য সচিব করা হয় রাকিব খানকে। ওইদিন জেলা কমিটি উভয় কমিটিকে অনুমোদন দেন। অথচ কয়েকদিন যেতে না যেতেই কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে নীল নকশা করে সংসদ সদস্য আদেল কেন্দ্রীয় কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে তারই সুপারিশে গত ২০ জুলাই সৈয়দপুর উপজেলা ও পৌর জাতীয় পার্টির পাল্টা আহবায়ক কমিটি গঠন করনে নীলফামারী জেলা কমিটির মাধ্যমে। এছাড়া তাঁর (সংসদ সদস্য) নানা অনিয়মের বিষয়টি বক্তারা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

সভায় আগামী ২৪ জুলাই ইউনিয়ন কমিটিগুলো গঠনের পর আগামী ৩০ জুলাই সাধারণ সভা করা হবে। ওই সভায় এমপি আদেলের সকল নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরা হবে বলে জানান স্থানীয় নেতারা।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহবায়ক ফয়সাল দিদার দিপু বলেন, দলের কোন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত না থেকে এমপি আদেল তারঁ পছন্দের লোকজনকে নিয়ে সকল কাজ করে আসছেন। এছাড়া সৈয়দপুরের উন্নয়নে কোন ভূমিকা না রেখে শুরু থেকেই বৈষম্যমূলক আচরণের মাধ্যমে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা ছাড়াও সৈয়দপুরবাসীও বিক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার কথা হয়, সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিকের সাথে। তিনি আলাপনকে বলেন, সংসদ সদস্য আহসান আদেলুর রহমান আদেল জাতীয় পার্টিকে সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল করার খেলায় মেতে উঠেছেন। তাঁর অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে জনগন জাতীয় পার্টি বিমুখ হচ্ছেন। তার কারণে দলের জনপ্রিয়তা কমার পাশাপাশি দল সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায়না বলে সকল স্তরের নেতা কর্মীর সিদ্ধান্তে তাকে দলীয়ভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই এ বিষয়ে বৃহৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেন মুহাম্মদ এরশাদের ভাগ্নে আহসান আদেলুর রহমান আদেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকুরী করতেন আদেল। রাজনীতিতে কোন সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও মামা এরশাদ তাকে বিদেশ থেকে এনে সরাসরি দলীয় মনোনয়ন দিলে মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। রাজনীতি বিচ্ছিন্ন নিজের ভাগ্নেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় পার্টির স্থানীয় একটি অংশের নেতা-কর্মীরা এর বিরোধিতা করেছেন।

এছাড়াও নির্বাচিত হওয়ার পর নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর না রাখাসহ এলাকার উন্নয়নে কোন ভূমিকা না রাখার অভিযোগ করে আসছেন পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এনিয়ে নেতা কর্মীদের মধ্যে যে বিক্ষোভ দানা বেধেছিল তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আদেলকে অবাঞ্ছিত ঘোষোণার মধ্য দিয়ে।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি