গাড়ি কেনার আগেই তেলে গেল ২৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা!

গাড়ি কেনার আগেই তেলে গেল ২৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা!
সর্বমোট পঠিত : 122 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

উন্নয়ন প্রকল্পের গাড়ি কেনার আগেই গাড়ির জ্বালানি (তেল ও লুব্রিকেন্ট) বাবদ ২৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা তুলে তা ব্যয় দেখানোর জন্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীকে দায়ী করা হচ্ছে। আলোচিত এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে রাজশাহী শহরে অবস্থিত বাবার বাড়ির বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিলের পাশাপাশি গৃহকর্মীর বেতনের টাকাও বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে তোলার অভিযোগ রয়েছে।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের হিসাব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে গাড়ি কেনার আগে জ্বালানি বাবদ এত টাকা ব্যয়ের এ তথ্য পাওয়া গেছে।


এ অনিয়মের খবরে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। তাদের আশঙ্কা, মুখ খুললেই বিপদ হবে।


উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করে নিউজবাংলাকে বলেছেন, গাড়ি কেনার আগে জ্বালানি বাবদ যে সোয়া ২৫ লাখ টাকা তোলার কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার ভাউচারে তিনি সই করেননি। তিনি আসলে চক্রান্তের শিকার। যারা এই চক্রান্তে জড়িত, তারাও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জালিয়াতিতে জড়িত।


নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের জুন মাসে একটি ভাউচারের (নং ৪) মাধ্যমে পাবনার ইয়াকুব ফিলিং স্টেশনকে ২৪ লাখ ৬৫০ টাকা পরিশোধ করা হয়। একই সঙ্গে আরেকটি ভাউচারের (নং ৩) মাধ্যমে ভ্যাট বাবদ ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৬০ টাকার চালান সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু এসব বিলের সঙ্গে কোনো সাব-ভাউচার দেয়া হয়নি।


অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩০ জুন গাড়ির জ্বালানি বাবদ মোট ব্যয় দেখানো হয় ২৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ঠিক একই দিন অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের জন্য গাড়ি কেনা দেখানো হয়। প্রশ্ন উঠেছে, গাড়ি কেনার আগে ২৫ লাখের বেশি টাকার জ্বালানি পুড়ল কীভাবে?


এ-সংক্রান্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা।


এতে বলা হয়, প্রকল্পের কাজের জন্য কেনা গাড়ি প্রকল্প পরিচালক বুঝে পাওয়ার আগেই জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধ করা হয়, যা সম্পূর্ণ অনিয়মিত ব্যয়। উল্লেখ্য, ২৪ লাখ ৬৫০ টাকার জ্বালানি তেল ব্যবহারের পক্ষে কোনো সাব-ভাউচার বিলের সঙ্গে পাওয়া যায়নি। তাই প্রকল্পের গাড়ি বুঝে পাওয়ার আগে সাব-ভাউচার ছাড়া মোট ২৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয় নিরীক্ষায় গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০০১ মোতাবেক এই আর্থিক অনিয়মের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দায়ী।


নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মন্তব্য অংশে বলা হয়েছে, ক্রয়কৃত গাড়ি বুঝে পাওয়ার আগে জ্বালানি ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই।


এ বিষয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে এমনতিই অতিরিক্ত গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ আছে। এর মধ্যে গাড়ি কেনার আগেই জ্বালানি বাবদ লাখ লাখ টাকা খরচ করা খুবই ন্যক্কারজনক। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।


এ বিষয়ে কথা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আজিজুর রহমানের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি তো আসলে ফেসবুক-ইন্টারনেট চালাই না। শুনেছি, অনেকে বলে, তার নামে অনেক অভিযোগ আছে। কিন্তু আমি ডিটেইলস জানি না। কী কী অভিযোগ তাও জানি না। শুধু শুনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’


এমন খরচের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রোস্তম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে তেলের ওসব ভাউচার আমার না। ওগুলো পরিবহন ডিপার্টমেন্টের ভাউচার। ওই ভাউচারে আমার সই ছিল না। আমি সই করিনি। আর আমি যে চক্রান্তের শিকার, তা তো আপনাকে এর আগেও বলেছি।’


তিনি বলেন, ‘যারা চক্রান্ত করছে, তাদেরও অনেক জালিয়াতির প্রমাণ আমার কাছে আছে। আপনি চাইলে দিতে পারব।’

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি