বগুড়ায় অতিরিক্ত বাস ভাড়ায় জরিমানা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

সর্বমোট পঠিত : 92 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম রেজা বলেন, আদালতের করা জরিমানার অর্থ ফেরত চেয়ে পরিবহন নেতা-কর্মীরা অবরোধ করেন। পরে তাদের সমন্বিত হস্তক্ষেপে সমঝোতার মাধ্যমে পরিবহন নেতা-কর্মীরা অবরোধ তুলে নেন।

বগুড়া আন্তঃজেলা বাস ভাড়ায় অতিরিক্ত টাকা নেয়ার দায়ে জরিমানা করে উল্টো তোপের মুখে পরেছিল বগুড়া জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

আদালত পরিচালনার এক পর্যায়ে সড়ক অবরোধ করেন বাস কাউন্টারের  লোকজন। তবে এমন অবরোধকে পুরোটাই অনৈতিক বলছেন সাধারণ মানুষ ও বাস যাত্রী।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের ঠনঠনিয়া আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে এসব ঘটনা ঘটে। পরে পৌণে ১ টার দিকে প্রশাসন ও সদর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেয় বাস মালিক-শ্রমিক নেতারা।

অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসন। আদালত সূত্র জানায়, বগুড়া থেকে ঢাকা রুটে নন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারিত মূল্য ৪৫০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ আসে বাস কাউন্টার থেকে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫৫০ টাকা। পরিপ্রেক্ষিতে ঠনঠনিয়া কাউন্টারে গেলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। 

এ ঘটনায় শ্যামলী পরিবহণের ম্যানেজার কামালকে ৬ হাজার টাকা অর্থদন্ড দেয়া হয়। এ ছাড়াও শাহ ফতেহ আলী ও একতা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতারা অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন। 

কিন্তু কাউন্টার কর্তৃপক্ষরা ভাড়া নেয়ার বিষয়টি তাদের বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সিদ্ধান্ত বলে জানান। পরে এক পর্যায়ে টার্মিনালের লোকজন বাস বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি উত্তেজিত বাস শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। তবে অবরোধের ২০ মিনিট পর কাউন্টার লোকজন আবার তা তুলে নেয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ম্যানেজার আজাদ জানান, ১৫ মে পর্যন্ত বগুড়া থেকে ঢাকার বাস ভাড়া ৫৫০ টাকা করে নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠন। তবে এসি গাড়িতে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে তাদের গাড়িগুলো ফাঁকা আসছে। এখানে তাদের লোকসান হচ্ছে। 

জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ বিন মনসুর। তিনি বলেন, অতিরিক্ত মূল্যের টিকিট পাওয়ায় শ্যামলী পরিবহনকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর সব কাউন্টারকে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪৫০ টাকায় টিকিট বিক্রি করতে বলা হয়েছে। কারণ সরকারের অনুমতি ব্যতিরেকে বাস সংগঠন এককভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

কিন্তু পরিবহন নেতা আমিনুল ইসলাম কাউন্টারে আসলে ১২ টার দিকে শ্রমিকরা আবার উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

তাদের দাবি, জরিমানা অর্থ আদালতকে ফেরত দিতে হবে। এমন দাবিতে তারা আবার সড়ক অবরোধ করে দেন।

এ সময় বগুড়া বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আসার আগে পরিবহন সংগঠনের কাউকে জানানো হয়নি। তারা এসে অযাচিতভাবে জরিমানা করেছেন। এই টাকা  ফেরত দিতে হবে।   

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, একটা রায় ঘোষণা হলে সেটার অর্থ ফেরত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে রায়ে কারো কোনো আপত্তি থাকলে সেই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মহোদয় বরাবর আপিল করতে পারবে। বাস কাউন্টার পক্ষকে তিনি সেই কথাও বলেছেন মর্মে জানান তিনি। তারা এ বিষয়টি মেনে নিয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেছেন।

এদিকে ভ্রাম্যমান আদালত শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের কাউন্টারে অভিযান চালালে কাউন্টারের কর্মীরা ও উপস্থিত পরিবহন শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা কাউন্টারের শাটার নামিয়ে বন্ধ করে দেন। এরপরেই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলো সাতমাথা-বনানী মহাসড়কে রেখে রাস্তা অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এসময় সড়কের দুই পাশে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়৷ দুপুর ১২ টার দিকে প্রশাসনের সাথে প্রাথমিক সমঝোতায় বাস কাউন্টারগুলো খুলে দিয়ে রাস্তার অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হয়। এর ১০ মিনিটের মধ্যে শ্রমিকরা আবারও সাতমাথা-বনানী আঞ্চলিক সড়কে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বাসগুলো রেখে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এসময় সড়কের দুই পাশেই আগের চাইতে তীব্র যানযটের সৃষ্টি হয়।

এসময় বাস কাউন্টারে আসা ঢাকাগামী প্রায় কয়েকশত যাত্রীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে দ্বিতীয় দফা অবরোধ চলার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড ত্যাগ করতে চান। ওই সময় উপস্থিত বাস কাউন্টার ও পরিবহন শ্রমিকরা ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহায়তাকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ি আটকে দেয়। প্রায় ২০ মিনিট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অবরুদ্ধ থাকার পর সদর থানার ওসি সেলিম রেজা ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি পরিবহন নেতা আমিনুল ইসলামের সাথে তাৎক্ষণিক আলোচনা করেন ও সব সমস্যার আইনগত সমাধানের আশ্বাস দেন। 

এরপরে দুপুর ১ টার দিকে মটর মালিক নেতা আমিনুলের নির্দেশে অবরোধ তুলে নেন ও বাস কাউন্টারগুলো খুলে দেন। এরপরেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
 
এ বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সেলিম রেজা বলেন, আদালতের করা জরিমানার অর্থ ফেরত চেয়ে পরিবহন নেতা-কর্মীরা অবরোধ করেন। পরে তাদের সমন্বিত হস্তক্ষেপে সমঝোতার মাধ্যমে পরিবহন নেতা-কর্মীরা অবরোধ তুলে নেন।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি