ঈদ আনন্দ নেই শেরপুরে ফসল হারানো দুই হাজার কৃষক পরিবারের

ঈদ আনন্দ নেই শেরপুরে ফসল হারানো দুই হাজার কৃষক পরিবারের
সর্বমোট পঠিত : 305 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশীদ জানান, হঠাৎ ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে এক এক জনের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আসলেও এ ক্ষয়ক্ষতি সরকারের একার পক্ষে পুষিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থের মধ্য দিয়ে এক লক্ষ টাকা ও ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছি। আরো বরাদ্ধের জন্য চাহিদাপত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেব।

ঈদের আছে আর দুইদিন। যে সময়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে ফসল তোলা ও ঈদের আনন্দ থাকার কথা আর এ সময়ে কৃষকদের কপালে চিন্তা ও হতাশার ভাজ। শেরপুরে ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ফসল হারিয়ে চিন্তা ও হতাশায় ভোগছে দুই হাজার কৃষক পরিবার। ঈদ তো দুরের কথা বছরের বাকি সময় কিভাবে কাটবে এ নিয়ে চিন্তায় কৃষকরা। কৃষক পরিবারে বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও ঈদ আনন্দ নেই। মহাজনী ঋণ পরিশোধ আর পরিবারের সারা বছরের ভরণ-পোষণ নিয়ে অজানা আতংকে শেরপুরের হাজার হাজার কৃষক।যেখানে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা কঠিন সেখানে ঈদ আনন্দ উপভোগের সুযোগ নেই।

জেলা কৃষি বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে, শেরপুর জেলার ৫২টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌর এলাকায় এ বছর ৯১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু গত ১৯ এপ্রিল ভোরে ঘন্টাব্যাপী শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ের তান্ডবে শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও শেরপুর সদর উপজেলার ৭ ইউনিয়নের দুই হাজার একর জমির বোরো ধানের আবাদ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। এ এলাকার ১ হাজার ২০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও ৮০০ একর জমির বোরো ধান। ছিদ্র হয়ে যায় টিনের ঘরের চাল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় শতশত ঘর-বাড়ী ও সবজীর আবাদ। স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে পড়ে কৃষকের। ফলে দুশ্চিন্তা আর খেয়ে না খেয়ে চলছে তাদের সংসার।

শ্রীবরদীর কুরুয়া, কুড়িকাহনিয়া, গোশাইপুর, মাটিয়াকুড়া, জঙ্গলখিলা ও ঘোনাপাড়ার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এক ফসলা জমি হওয়ায় বোরো ফসলের ওপর নির্ভর করে ঐ এলাকার কৃষকের সারা বছরের জীবিকা। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা, বিয়ে-শাদি, আনন্দ-উৎসব সব নির্ভর করে একটি ফসলের ওপর। কিভাবে পরিশোধ করবো ঋণ, সেচ ও জমি চাষের বিল। সারা বছর খাবই বা কি ? এসব চিন্তার মধ্যে ছেলে মেয়েদের বায়না জামা-কাপড়ও কিনতে পারছিনা। সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঈদ করবোই বা কি করে ?

ইতিমধ্যে ধান পাকায় কাটাও শুরু হয়েছে। এবার ধানও হয়েছিলো ভালো। কৃষকরা আশা করেছিলো ধান বিক্রি করে মিটাবে কৃষি ঋণ ও জমি চাষ এবং সেচের টাকা পরিশোধ করবে। সারা বছরের খাবার জোগাবে এ ফসল থেকেই। এতে নি:স্ব প্রায় দুই হাজার কৃষক পরিবারে চলছে হতাশা। ঈদ আসলেও এসব পরিবারে নেই ঈদের কোন আনন্দ।

গোশাইপুরে কৃষক জারুল ইসলাম বলেন, দেড়কুড় জমি লাগাইছিলাম। সম্পুর্ণ জমিন হিলে খাইয়া গেছেগা। এহন আমগর চলার কোন পথও নাই। কিভাবে চলমু ৪০ হাজার টাহা ঋণ করছিলাম। ধান বেইচা ঋণ শোধ করমু বইলা। তাও পাইলাম না। গরুযে খাওয়ামু খেড়ও নাই। ঈদ আইয়া পরছে। দুইদিন পরেই ঈদ পোলাপান গরে কিছ্ ুকিন্না দিবার পাই নাই। আমাগর ঈদ এইবার শেষ।
কুড়িকাহনিয়ার কৃষক রহমত মিয়া বলেন, দুইকুর ধান আবাদ করছি। ৩০-৩৫ হাজার টাহা ঋণ করছি। টাহা পইসা নাই। এক ছটাক ধানও পামু না। ঋণ দফা কিয়া হুজমু এইলা। বাড়িত খাওনা নাই। পোলাপানের ঈদের খরচ কিছুই করা হামুনা। এক ফসলা জমিন এইলা। সারাবছর কি কইরা খামু এহন।
কৃষানী মলেদা বেগম বলেন, এহন তো ধান কাডা শুরু করতাম আমরা। টাহারও অভাব থাকতো না। কিন্তু  হিলে তো সব শেষ কইরা দিছে। ধান যা লাগাইছিলাম কিছুই নাই। পুকুরও মাছ আছিল তাও আস্তে পানি নষ্ট হইয়া মইরা গেতাছে। ঈদ কাপড় চোপড়ও কিনি নাই এইবার। পোলাপান নিয়া খুব কষ্টে আছি। আমাদের ঘরে খাওনই নাই।

শিশু-কিশোররা জানায়, তাদের ধানের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার নতুন কাপড় কিনতে পারছেনা। এজন্য ঈদ করা হচ্ছে না তাদের।

শিশু নাঈম মিয়া বলে, আমগর তো সব শেষ। আমগর বাপ-মা এইসময়ে ফসল কাইটা ঈদের জামা কাপড় কিন্না দিতো। আমগর এইবার ফসল কাটাও নাই ঈদও নাই।
কিশোর মো: সাদিকুল ইসলাম বলে, এইবার আমাদের যে অবস্থা শিল পইরা তো সব ধান শেষ। তারজন্য আমাদের বাবা-মা ঈদে নতুন কাপড় চোপড় কিনে দিতে পারতাছে না। আর এই ধানের উপর আমরা নির্ভর থাকি। আমগর এইবার আর নতুন কাপড় পইরা ঈদ করা হবে না।

শেরপুরেরজেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশীদ জানান, হঠাৎ ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে এক এক জনের লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আসলেও এ ক্ষয়ক্ষতি সরকারের একার পক্ষে পুষিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থের মধ্য দিয়ে এক লক্ষ টাকা ও ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করেছি। আরো বরাদ্ধের জন্য চাহিদাপত্র মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করে দেব।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি