রমজান শেষে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন

সর্বমোট পঠিত : 287 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

রমজান এলো, রমজান গেল; কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কতটুকুু—এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ করার সময় হয়েছে। রমজান হলো মুমিনের জন্য বার্ষিক সুযোগ, যেন সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, গোমরাহি থেকে হিদায়াতের পথে আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

রমজান এলো, রমজান গেল; কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কতটুকুু—এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ করার সময় হয়েছে। রমজান হলো মুমিনের জন্য বার্ষিক সুযোগ, যেন সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, গোমরাহি থেকে হিদায়াতের পথে আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

ভাবার বিষয় হলো, আমরা কতটুকু আমল করতে পেরেছি, কতটুকু নিজেকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তুলতে পেরেছি, আত্মশুদ্ধির এই মাসে আমরা নিজেদের কতটা শুধরে নিতে পেরেছি, ইবাদতের বসন্ত মৌসুমে কী পরিমাণ পুণ্যের ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি, কোরআন নাজিলের মাসে আমাদের জীবনকে কতটা কোরআনময় করতে পেরেছি, তাকওয়া অর্জনের মাসে আমরা কতটা খোদাভীতি অর্জন করতে পেরেছি, রমজানের দাবি আমাদের জীবনে কী পরিমাণ বাস্তবায়িত হয়েছে—এসবের যোগ-বিয়োগ করার সময় এখনই।

সুফিবাদের পরিভাষায় এ হিসাব-নিকাশ করাকে ‘মুহাসাবা’ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মধ্যে বিমুখ হয়ে আছে। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)

এ বিষয়ে হজরত ওমর (রা.)-এর একটি চমৎকার কথা রয়েছে—‘তোমার হিসাব নেওয়ার আগে তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিয়ে নাও। ’ আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানিতে যাদের যথাযথ আল্লাহর রহমত অর্জনের তাওফিক হয়েছে, তারা খুবই ভাগ্যবান। কারণ এ মাসের বরকত থেকে বঞ্চিতরা সবচেয়ে হতভাগা। নিজের হিসাব নিজে নেওয়ার এই প্রক্রিয়াকে আরবিতে ‘মুহাসাবা’ বলা হয়।

মুহাসাবা আরবি শব্দ। এর অর্থ আত্মপর্যালোচনা। ইসলামে আত্মপর্যালোচনার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা...। ’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

একজন মুমিন দুনিয়াকে মনে করে তার কর্মক্ষেত্র আর আখিরাতকে বিবেচনা করে ফল লাভের স্থান হিসেবে। ফলে সে বারবার তার কৃতকর্মের হিসাব করে। উত্কৃষ্ট কর্মের ওপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আর মন্দ কর্মের ওপর লজ্জিত হয়। নিজেকে শুধরে নিতে ও বদলে দিতে প্রত্যয়ী হয়।

আত্মপর্যালোচনার দুটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায় হলো—যেকোনো কাজের আগে পর্যালোচনা করা। কাজটি যদি সাধ্যাতীত হয় তাহলে সে পথে পা না বাড়ানো। আর যদি নাগালের মধ্যে থাকে তাহলে চিন্তা করবে কাজটি তার কতটুকু উপকার বয়ে আনবে? যদি সেটি অনর্থক কাজ হয়, তাহলে সেটা ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ ও ঈমানের পরিচায়ক। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা’ (তিরমিজি,  হাদিস : ২৩১৮)

অতঃপর কাজটি যদি উপকারী হয়, তখন চিন্তা করবে কাজটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করছে কি না? যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হয় তাহলে কাজটি করবে। আর যদি ইখলাসে ঘাটতি থাকে তাহলে কাজটি ছেড়ে দেবে বা নিয়ত সংশোধন করে নেবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের মুহাসাবা হলো কার্যসম্পাদনের পর। এই মুহাসাবার কয়েকটি ধরন রয়েছে। যেমন—মুমিন কোনো ভালো কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে মানবীয় দুর্বলতার কারণে কোনো ভুল হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তাই যেকোনো ভালো কাজের পর মুমিনের উচিত আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ইস্তেগফার করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বিনে প্রবেশ করতে দেখবে, তখন তুমি তোমার রবের প্রশংসায় তাসবিহ পড়ো এবং ইস্তেগফার করো। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। ’ (সুরা : নাসর, আয়াত : ১-৩)

কার্যসম্পাদনের পর মুহাসাবার আরেকটি ধরন হলো—শয়তানের ধোঁকায় কোনো গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করে ফেলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই ভুল করে। তবে সর্বোত্তম হলো সে, যে ভুলের পর তাওবা করে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৯৯)

এ ছাড়া একজন মুমিন দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক কর্মকাণ্ডেরও হিসাব করে থাকে। অতীত জীবন শুধরে ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর করার চেষ্টা করে। ইবনে উমর (রা.) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবকাশে পীড়িত অবস্থার জন্য সঞ্চয় করে রেখো। আর জীবিত অবস্থায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়ো। (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৩)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি