‘বাবায় আমার বাড়িত আইল নিথর দেহ লইয়া’

সর্বমোট পঠিত : 290 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

এ সময় হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাবায় আমার বাড়ীতে আইল ঠিকই তয়, নিথর দেহ লইয়া আইলো।’ মা আমেনা বেগম বলেন, ‘এ্যাহন আর কে মোর খবর লইবে, রাইতে ওষুধ খাইয়াবে, সবই আমার শ্যাস।’ পরতে চেয়েছিল শেরওয়ানি, ফিরল কাফনের কাপড় পরে: হাদিসুরের খালা

বিদেশবিভুঁই সফর শেষে ঘরে ফিরবে প্রিয় সন্তান। মা বুকে জড়িয়ে ধরবেন, বাবা ভাসবেন আনন্দাশ্রুতে। কিন্তু হোসনাবাদ কদমতলার হাদিসুর যে ফিরছেন নিথর হয়ে। শোক সায়রে ভেসে অশীতিপর বাবা-মা ক্ষণ গুণছেন সন্তানের মৃতদেহ কখন আসবে উঠানে। সন্তানের নিথরমুখ জড়িয়ে ধরে শেষবারের মতো চুমু খাবেন মা।

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলায় নিহত নৌ প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান আরিফের মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তার স্বজনরা। সোমবার বিকেলের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছানোর কথা রয়েছে তাদের।

বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ কদমতলার শোকার্ত মানুষ প্রিয় হাদিসুরের অপেক্ষা। শেষবারের মতো এই মাটির মেধাবী সন্তানকে ছুঁয়ে দেখতে ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

শোকার্ত সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল হাদিসুরের স্বজন আর প্রতিবেশীরা সব জড়ো হয়েছেন।

এ সময় হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বাবায় আমার বাড়ীতে আইল ঠিকই তয়, নিথর দেহ লইয়া আইলো।’ মা আমেনা বেগম বলেন, ‘এ্যাহন আর কে মোর খবর লইবে, রাইতে ওষুধ খাইয়াবে, সবই আমার শ্যাস।’  পরতে চেয়েছিল শেরওয়ানি, ফিরল কাফনের কাপড় পরে: হাদিসুরের খালা

সোমবার বেলা ১২টার পর হাদিসুরের মরদেহ বহনকারী টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। হাদিসুর রহমানের মরদেহ গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাসানুর রহমান রিমন।

ভাইয়ের কফিন ছুঁয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রিন্স। তার আহাজারিতে বিমানবন্দরের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এরপর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বরগুনার বেতাগীর হাসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা।

মরদেহ গ্রহণ করার পর শওকত হাসানুর রহমান রিমন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠিন পদক্ষেপের কারণে আমরা হাদিসুরের মরদেহ তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দায়িত্ব পালন করেছেন, বাকি যা কিছু করার তিনি করবেন।’

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক আমির মো. আবু সুফিয়ান সমকালকে বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী হাদিসুরের পরিবার ইনস্যুরেন্সসহ সব ধরনের সুবিধাদি পাবেন।

হাদিসুরের স্বজনরা জানিয়েছেন,পারিবারিক কবরস্থানে ইতোমধ্যেই কবরের নমুনা করে রাখা হয়েছে। বিদেশ বিভুঁইয়ে বীরের মতো প্রাণ হারানো হাদিসুরকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে আসা লোকজন যেন কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই তাকে দেখতে পারে এজন্য নেওয়া হয়েছে সব প্রস্তুতি। এছাড়া তার বাড়ির উঠানে টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা, আগত লোকজনকে বসতে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে চেয়ার।

চাচা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার বেলা ১০টায় বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে জানাজা হবে। এরপর

মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে হাদিসুরকে সমাহিত করা হবে। দাদা আতাহার উদ্দীন হাওলাদার এবং দাদী রোকেয়া বেগমের কবরের পাশেই তাদের আদরের নাতিকে সমাহিত করা হবে বলে জানা গেছে।

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে আটকে থাকা অবস্থায় গত ২ মার্চ রকেট হামলার শিকার হয় বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। এতে নিহত হন ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।

ওই জাহাজে থাকা হাদিসুরের সহকর্মীরা অনেক পথ পেরিয়ে গত বুধবার ঢাকায় আসেন। জাহাজ থেকে নেমে নিরাপদ আশ্রয়ের বাংকার পর্যন্ত মরদেহ নিয়ে এসেছিলেন তারা। তবে যুদ্ধের ময়দান থেকে আর তা তাদের সঙ্গে আনতে পারেননি। হাদিসুরের মরদেহ রাখা হয়েছিল বাংকারের ফ্রিজারে।

শুক্রবার ভোরে ইউক্রেন থেকে রওনা হয়ে হাদিসুরের লাশবাহী গাড়ি রাতে প্রতিবেশী দেশ রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে পৌঁছায়। সেখান থেকে টার্কিশ এয়ারওয়েজের একটি কার্গো ফ্লাইটে শনিবার রাতে মরদেহ পাঠানো হয় দেশের উদ্দেশ্যে। রোববারই মরদহে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিরূপ আবহাওয়ায় ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় রোববার হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি