আপনি পুরস্কার পাবেন, কেউ যদি খারাপ কিছু করে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই

যারা দেশের কল্যাণে কাজ করবেন তারা পুরস্কৃত হবেন: প্রধানমন্ত্রী

পুরস্কৃত হবেন: প্রধানমন্ত্রী
সর্বমোট পঠিত : 59 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

পদক প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা ভালো কাজ করবেন, যাদের ভেতরে নতুন নতুন প্রণোদনা আছে বা ইনোভেটিভ আইডিয়া আছে বা দেশের কল্যাণের জন্য যারা কাজ করব্নে, তারা পুরস্কৃত হবেন। সেইভাবেই আমরা জনপ্রশাসন পদক প্রদান করা….. এটা ভালো কাজের স্বীকৃতি …..এবং প্রণোদনা দেওয়ার জন্য আমরা এটা করেছি। ’ একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খারাপ’ কাজে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যারা দেশের কল্যাণে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার জনপ্রশাসন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জনপ্রশাসন পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের পদক দেওয়া সম্ভব হয়নি। এজন্য ২০২০ ও ২০২১ সালের পদক একসঙ্গে দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জন্য ১৫টি এবং ২০২১ সালের জন্য ২০টি জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয়েছে।

পদক প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা ভালো কাজ করবেন, যাদের ভেতরে নতুন নতুন প্রণোদনা আছে বা ইনোভেটিভ আইডিয়া আছে বা দেশের কল্যাণের জন্য যারা কাজ করব্নে, তারা পুরস্কৃত হবেন। সেইভাবেই আমরা জনপ্রশাসন পদক প্রদান করা….. এটা ভালো কাজের স্বীকৃতি …..এবং প্রণোদনা দেওয়ার জন্য আমরা এটা করেছি। ’

একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খারাপ’ কাজে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘ভালো কাজে যেমন আপনি পুরস্কার পাবেন, কেউ যদি খারাপ কিছু করে, তাদের কিন্তু ক্ষমা নেই। তাদেরও কঠোর শাস্তি পেতে হবে। এই শৃঙ্খলাটা থাকতে হবে, এই নিয়মটা থাকতে হবে।সেটাও অবশ্যই আমরা করব।’
বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে জনপ্রশাসন নীতির কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসতে অনেক সময় লেগেছে এটা ঠিক। কিন্তু সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ হিসেবে সবসময় একটা প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। কারণ জাতির পিতা যে আদর্শটা দিয়েছিলেন সে আদর্শটা সামনে নিয়ে আমরা এগোচ্ছিলাম। যার ফলে একটা সরকার যে জনগণের সেবক সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, তো আমরাও সেই নীতিতে বিশ্বাস করতাম। আমরা সেভাবেই চেষ্টা করেছি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে।’

শেখ হাসিনা জানান, দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণ করে, পরবর্তীতে বিশ্ব প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তার পরিবর্তনও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সেই সাথে আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি, একটা যদি সুষ্ঠু দিক নির্দেশনা না থাকে, যে আমরা কোথাও যাবো, কি করব, কত দূর যাব। আবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করতে হয়, তাহলে আমরা অভীষ্ট্য লক্ষে পৌঁছাতে পারি। তো আমরা সেভাবেই আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালাকে সময়োপযোগী করা….. পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে আমরা আরও পরিবর্তন এনেছি, পাশাপাশি আমাদের করণীয় ঠিক করেছি। কোনটার উপর প্রাধিকার দেব, সেটাও আমাদের সুনির্দিষ্ট করা ছিল। সরকার গঠনের সাথে সাথে আমরা সেইভাবে কাজ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছি। প্রথম পাঁচ বছর অল্প সময় চলে গেছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন আমি এসেছি তখন আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ‘জনগণের সেবক’ হিসেবে ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেন দলটির সভাপতি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ৭৫’ সালের পর অনুভব করতে পারে যে, সরকার মানে জনগণের সেবক এবং জনগণ সরকারের সেবা পেতে পারে।’

সরকারের কর্মকাণ্ডে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়নের জন্য সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যাদের নিয়ে আমরা কাজ করব, তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সঠিক কাজগুলো যেন আমরা করতে পারি, সে ব্যবস্থা নেওয়া। সেই সাথে সাথে কাজের একটা মূল্যায়ন করা বা স্বীকৃতি দেওয়া সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কতগুলো পদক্ষেপ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমি বলব, সরকারি কর্মচারী যারা থাকেন আসলে তাদের যদি সঠিকভাবে দিক নির্দেশনা দেওয়া যায় বা কর্মপরিকল্পনা দেওয়া যায় তাহলে তারা যে অসাধ্য সাধন করতে পারেন, আজকে তাই প্রমাণিত। তাদের উৎসাহিত করা, কাজে আগ্রহী করা, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা…. এটা যেমন সরকারি কর্মচারীদের শুধু না, সারা বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা প্রয়োজন যে আমরাও পারি …..তো সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল সব্সময়। কাজেই আমরা প্রথমবার, দ্বিতীয়বার থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যে আমরা সরকারে এসেছি, আমরা সে প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।’

দেশের খেটে খাওয়া মানুষের উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার গঠন করা বা ক্ষমতায় আসা এটা শুধু ভোগ বিলাসের বিষয় নয়। বা আমি প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছি দেখে তা নয়। এটা একটা বিরাট দায়িত্ব। সেই সাথে আমার যারা সহকর্মী, বিশেষ করে সরকারি কর্মচারী যারা আপনাদেরও দায়িত্ব বাংলাদেশের জনগণ তারাই তো আপনাদের ভরণপোষন, খাবার জোগান সবই তো করে, আমাদের সকলের জন্য করে। তো তাদের জন্য কতটুকু কী করতে পারলাম, তাদের কতটুকু দিতে পারলাম, সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় বিষয়। তাদের সার্বিক উন্নয়টাই হচ্ছে আমাদের সকলের দায়িত্ব, যে যেখানে সরকারে আসুক। সেটা যদি না হয় তাহলে কিন্তু একটা দেশ এগোতে পারে না।’

প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে আরও বেশি জানার সুযোগ পান, সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানতে পারেন।কিভাবে একেকটা এলাকার উন্নয়ন করা যায়, সেটা আপনারা সব থেকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারেন। আমি আশা করি, সেইভাবে আপনারা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কিভাবে নেওয়া যায়, মানুষের সেবা করা যায়, মানুষকে কিভাবে উন্নত জীবন দেওয়া যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ- রূপকল্পের বাস্তবায়নে সময় সাশ্রয় হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষ সেবা পাচ্ছে। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশের সেবাগুলো ব্যাপকভাবে মানুষ পাচ্ছে এবং সুবিধাগুলো মানুষ পাচ্ছে। আজকে আমরা মানুষকে সহযোগিতা দিই, মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা দিই, সবকিছু আমরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে করে যাচ্ছি। এটা আমাদের সময় বাচাচ্ছে, কাজ করে দিচ্ছে, সবরকম সুযোগ করে দিচ্ছে’

দেশের উন্নয়নে সরকারি কর্মচারীদের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা যে এত উন্নয়ন করতে পারলাম, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। আমি ধন্যবাদ জানাই, আমাদের সরকারি অফিসার, কর্মচারী সকলকে। প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছেন। আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন। মানুষ তার সুভোগ ফলটা পেয়েছে বলে দেশের উন্নতিটা হয়েছে। এটা যদি না হত, তাহলে আমরা এত তাড়াতাড়ি উন্নতি করতে পারতাম না। ’

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথে আধুনিক প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনে গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের যারা সরকারি কর্মচারী আছেন, তাদেরও কিন্তু এটাই চিন্তা করতে হবে যে বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসবে, নতুন নতুন উদ্ভাবন হবে।তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তাহলেই আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারব।’

অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সঙ্কট সমাধান, প্লট কিনতে ঋণ ও ভর্তুকি সুবিধা, গাড়ি সুবিধার পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ১৫০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি