কেজিতে হাড়-চর্বি আড়াইশ গ্রাম সৈয়দপুরে সিন্ডিকেটের কবলে মাংসের বাজার: বিপাকে ক্রেতারা

কেজিতে হাড়-চর্বি আড়াইশ গ্রাম সৈয়দপুরে সিন্ডিকেটের কবলে মাংসের বাজার: বিপাকে ক্রেতারা
সর্বমোট পঠিত : 106 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

সংগঠনের সভাপতি নাদিম ওরফে ছোটু বলেন, সিন্ডিকেট নয় আমদানি কম থাকায় হাটে গরুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এছাড়া অন্যান্য খরচও বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন অন্যান্য শহরে মাংস ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের এখানে দাম এখনও অনেক কম।

মিজানুর রহমান মিলন সৈয়দপুর থেকে

বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সৈয়দপুরের মাংসের বাজারও। ব্যবসায়ীরা গরুর মূল্য বৃদ্ধি ও আমদানি কম থাকার অজুহাতে কোন যৌক্তিক ঘোষনা ছাড়াই মাংসের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটছে। ফলে তাদের মূল্য বৃদ্ধির কারসাজিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্রেতা সাধারণরা। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাংসের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করেছে সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।

সূত্র জানায়, ব্যবসা প্রসিদ্ধ এ উপজেলা শহরে প্রতিদিন গরুর মাংসের চাহিদা প্রচুর। এর মধ্যে কিছু অংশ হোটেলগুলোতে গেলেও বাকি অংশের ক্রেতা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। সূত্র মতে, সৈয়দপুর শহর ও গ্রামাঞ্চলে ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক ভাতের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের পাশাপাশি উপজেলার স্বচ্ছল পরিবারে নিত্যদিনের খাবারের মেন্যুতে গরুর মাংস থাকে। ফলে এ উপজেলায় প্রতিদিন মাংসের চাহিদা গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টন। স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন আশপাশের জেলার বিভিন্ন হাট বাজার থেকে পর্যাপ্ত গরু কিনে তা জবাইয়ের জন্য প্রস্তুত করে রাখেন। সে হিসেবে শহরের পশু জবাইখানাসহ বিভিন্ন এলাকা প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০টি গরু জবাই করা হয়। পরে ওইসব মাংস দোকানগুলোতে আসা মাত্র সিন্ডিকেটের নির্ধারণ করা দরে বিক্রি করা হয়। গত এক মাস থেকে এ অবস্থা চলছে শহরের মাংসের বাজারে।

ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ, হাট-বাজারগুলোতে গরুর পর্যাপ্ত আমদানি এবং বাজার মূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও ব্যবসায়ীরা আমদানি কম ও গরুর মূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচের অজুহাতে গেল বছরের শেষ দিন থেকে হঠাৎ করে মাংসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ক্রেতারা পূর্বের দামে বিক্রির কথা বললেও মাংস ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। তারা পূর্বের দর ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকার স্থলে বর্তমানে প্রতি কেজি গরু মাংস ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। ফলে মাংস ব্যবসায়ীরা তাদের ‘সিন্ডিকেট দরে’ প্রতিদিন সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অহেতুক এমন মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই ক্রেতাদের সাথে বাক-বিতন্ডার ঘটনাও ঘটছে অহরহ।

এ ব্যাপারে মাংস ক্রেতা ব্যবসায়ী এজে চৌধুরী বলেন, গত এক মাস থেকে মূল্য বৃদ্ধির এ অবস্থা চলছে। তিনি জানান, এর আগে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫০০ টাকা থাকলেও এখন ৫৪০ টাকা কেজি দরে মাংস কিনতে হচ্ছে। মুদি ব্যবসায়ী মো. হানিফ জানান, মাংসের দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ওজনের সময় প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ২৫০ গ্রাম হাড় ও চর্বি কৌশলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা বলেন হাড়-চর্বি কি আমরা বাড়ি নিয়ে যাব। রিক্সাচালক তছলিম বলেন স্ত্রী সন্তানদের জন্য ৫৪০ টাকা দরে আধা কেজি মাংস কিনেছিলাম। কিন্তু পরে ওজন করে দেখি মাংসের ভিতরে ১৫০ গ্রাম শুধু হাড় রয়েছে। কেবল তিনিই নন সকল ক্রেতাকেই মাংসের সাথে হাড় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে অস্বাভাবিক হারে।

বাজারে আসা চাকুরিজীবী মনোয়ারা বেগম (৬৮) জানান, মাংস কিনতে গিয়েছিলাম। বিক্রেতা দাম চাইলো প্রতি কেজি ৫৪০ টাকা, দাম শুনে মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। ফলে মাংস না কিনেই ফিরে এলাম।

সূত্র মতে, শহর ও গ্রাম মিলিয়ে সৈয়দপুরে প্রায় শতাধিক মাংসের দোকান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ওইসব ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোন কারণ ছাড়াই মাংসের দাম বৃদ্ধি করেছে। প্রথমে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫২০ এবং পরে আরও ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫৪০ টাকা কোথাও আবার ৫৫০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছে। মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোন যৌক্তিক ঘোষণা ছাড়াই সিন্ডিকেট করে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি করা ঠিক হয়নি। কারণ হাটে গরুর দাম এখনও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করেছে সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।

সংগঠনের সভাপতি নাদিম ওরফে ছোটু বলেন, সিন্ডিকেট নয় আমদানি কম থাকায় হাটে গরুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এছাড়া অন্যান্য খরচও বেড়ে যাওয়ায় মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন অন্যান্য শহরে মাংস ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের এখানে দাম এখনও অনেক কম।


মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি