রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জ সিটিতে ভোট

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে ১০ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী সরঞ্জাম শনিবার দেওভোগ মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে বিতরণ করা হয়।
সর্বমোট পঠিত : 105 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতা এবং এই কয়েকদিনে প্রার্থীদের প্রচারের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকতে পারে। সাখাওয়াত হোসেন অবশ্য মনে করেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ছোটখাটো কিছু সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

নারায়ণগঞ্জ সিটিতে টানা ১৮ দিনের জমজমাট প্রচার শেষে এখন ভোটের অপেক্ষা। শনিবারের রাত পোহালেই রোববার সকালে শুরু হচ্ছে ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই ১৯২টি কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে, ভোটের দিন নারায়ণগঞ্জের আবহাওয়া ভালোই থাকবে বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার থেকে ঝলমলে আকাশের দেখা মিলবে সারাদেশে। তাই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি ঘটবে বলে সবাই আশা করছেন। তবে অনেকের মধ্যেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, ইভিএমের কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে এবারই প্রথম ১৯২টি কেন্দ্রের সবক'টিতে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর আগে ২০১১ সালে এই সিটির ভোটে আংশিক ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মক ভোটিং শুরু হয়েছে।

মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য বড় দলের সরাসরি কোনো প্রার্থী নেই। অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির ধানের শীষ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক এই ভোটে অনুপস্থিত। কিন্তু বিএনপির দলীয় পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত সেলিনা হায়াৎ আইভীর নৌকা ও তৈমূর আলমের হাতি প্রতীক নিয়ে মূল আলোচনা চলছে। নির্বাচন নিয়ে নানা উত্তেজনা ও টানাপোড়েন থাকলেও এ পর্যন্ত অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর মেলেনি। নির্বাচন বিশ্নেষকরাও মনে করছেন, আগের দুইবারের মতো এবারের সিটি ভোটও শান্তিপূর্ণ হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতা এবং এই কয়েকদিনে প্রার্থীদের প্রচারের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকতে পারে। সাখাওয়াত হোসেন অবশ্য মনে করেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ছোটখাটো কিছু সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে মোট ওয়ার্ড ২৭টি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সদরে ১৮ট এবং বন্দর উপজেলায় ৯টি। মোট ভোটার পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৬ এবং পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৭ হাজার ৫১১। চারজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৯২টি। মেয়র পদের বিপরীতে লড়ছেন সাত প্রার্থী। সংরক্ষিত ৯টি নারী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের বিপরীতে লড়ছেন ৩৪ এবং ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের বিপরীতে লড়াইয়ে আছেন ১৮৯ জন।

১৮৭৬ সালে নারায়ণগঞ্জে পৌরসভা শুরু হয় এবং ২০১১ সালে পুরোনো নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও কদমরসুল পৌরসভাকে এক করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা দেশের সপ্তম সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। ২০১১ সালের ভোটে আওয়ামী লীগের 'বিদ্রোহী' প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এক লাখ ৮০ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম ওসমান পান ৭৮ হাজার ৭০৫ ভোট। ওই ভোটের শেষ মুহূর্তে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার কেন্দ্রের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে আইভী এক লাখ ৭৪ হাজার ৬০২ ভোটে আবার মেয়র নির্বাচিত হন। সেবার তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি