প্রনোদনা বাড়ানোর দাবি বিজিএমইএর

প্রনোদনা বাড়ানোর দাবি বিজিএমইএর
সর্বমোট পঠিত : 234 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

‘কিন্তু প্রধান রপ্তানিখাতের প্রধান দুটি বাজারে খুচরা বিক্রি এখনও মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, অর্থাৎ বাজারে পোশাকের স্বাভাবিক চাহিদাটি নেই। তাই প্রবৃদ্ধির মূল্যায়নটি যথাযথভাবে করা প্রয়োজন।’ আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রতাহার এবং রপ্তানিতে বিদ্যমান প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করাসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

শনিবার বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত ২০২১-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এসব দাবি জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজীম, সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, রফিকুল ইসলামসহ অন্যরা। বৃহস্পতিবার সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, করোনার ফলে গত দেড় বছরে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি বললেই চলে।

‘তাই নগদ সহায়তার ওপর আরোপ করা ১০ শতাংশ কর প্রতাহারের অনুরোধটি পুনবিবেচনার অনুরোধ করছি। এই মুহূর্তে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ক্যাশ-ফ্লো ম্যানেজ করা, যেটি করতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে। কর কিছুটা কমলে আমাদের ক্যাশ-ফ্লোতে কিছুটা স্বস্তি আসবে। এ কর প্রত্যাহার হলে সরকার খুব বেশি রাজস্ব হারাবে না, কিন্তু শিল্প উপকৃত হবে। কারণ পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়ালে অর্থনীতির বৃহৎ পরিসরে পণ্য ও সেবার জন্য ব্যয় ও লেনদেন বৃদ্ধি পাবে। হোটেল, পর্যটন, ব্যাংক, বিমা, প্রসাধনি ইত্যাদি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকারের পরোক্ষ আয় বাড়বে।’ ফারুক হাসান বলেন, করোনায় নতুন বাজারগুলো অর্থনৈতিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রপ্তানি কমে আসছে।

‘তাই নতুন ও অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি ধরে রাখতে প্রণোদনার হার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা অনুরোধ করছি। তাছাড়া বিগত দশকে দেশে নন-কটন, বিশেষত ম্যান-মেড-ফাইবার খাতে কিছু বিনিয়োগ হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছি না। কারণ তাদের কাঁচামাল ‘পেট্রোক্যামিকেল চিপস’ আছে এবং তাদের স্কেল ইকনোমির কারণে তারা প্রতিযোগী সক্ষমতায় অনেক এগিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা দেয়া হলে যে বিনিয়োগগুলো ইতিমধ্যেই হয়েছে তা সারভাইভ করে যাবে। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্হান সৃষ্টি হবে, রপ্তানি বাড়বে। পাশাপাশি নন-কটন বস্ত্র ও পোশাক খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য একটি বিশেষ স্কিমের সুপারিশ করছি।


তিনি বলেন, পোশাকখাত বরাবরই সরকারের সহায়তা পেয়ে আসছে, না হলে আমরা এত প্রতিকুলতা পাড়ি দিয়ে আজকের এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। ‘২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাকখাতের জন্য কর ও অন্যান্য নীতিমালার কোন পরিবর্তন আনা হয়নি, ফলে উৎসে কর, কর্পোরেট ট্যাক্স এবং প্রচলিত সব নগদ সহায়তা চলমান থাকবে। এটি একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু বাজেটে আমাদের বেশ কিছু প্রস্তাব ছিল, যা শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানো ও কর্মসংস্হানের জন্য অপরিহার্য, তার প্রতিফলন হয়নি।’

ফারুক হাসান বলেন, রুগ্ন/বন্ধ পোশাক কারখানার মালিকদের সার্বিক অবস্থা খুবই করুণ এবং মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নীতি সহায়তা পেলে তারা পুনরায় উৎপাদনে ফিরে আসতে পারবে। তাই রুগ্ন/বন্ধ কারখানা প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ঋণ, সুদ ও মামলা খরচ বাবদ সমুদয় অর্থ অবসায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করলে তারা পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনার আওতা ৫০ লাখ ডলার থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ডলার করার কথাও বলেছে বিজিএমইএ। তিনি বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে শিল্প নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। নতুন নতুন টেকনোলজি ব্যবহারের বিষয়গুলো সামনে আসছে। বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে বাজেটের ৯৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা থেকে পোশাকখাতের শ্রমিক এবং মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টদের দক্ষতা উন্নয়ন ও টেকনিক্যাল এবং ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখার জন্য অনুরোধ করছি।’

বিজিএমইএর অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে পোশাক শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য করোনাভাইরাসের টিকার ব্যবস্থা করা, সরকার খাস ও পতিত জমিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কারখানাগুলোর শ্রমিকদের পরিকল্পিত ও স্বাস্থ্যকর আবাসনের ব্যবস্থা করা, কারখানার জন্য বিআরটিসি থেকে কিছু পরিবহনের বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা, বস্ত্র ও পোশাকখাতের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা, রপ্তানির ওপর বর্তমান ০.৫০% উৎসে কর হার আগামী অন্তত পাঁচ বছরের জন্য স্থিতিশীল রাখা ইত্যাদি।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় এই বছরের ১১ মাসে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১১.১০ শতাংশ। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১১ মাসের তুলনায় তা ১০ শতাংশ কম। আবার চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আমরা ৭.১৫ শতাংশ পিছিয়ে আছি।

‘বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু প্রধান রপ্তানিখাতের প্রধান দুটি বাজারে খুচরা বিক্রি এখনও মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, অর্থাৎ বাজারে পোশাকের স্বাভাবিক চাহিদাটি নেই। তাই প্রবৃদ্ধির মূল্যায়নটি যথাযথভাবে করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, সার্বিক বাজেট নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের বাস্তবায়নটি চ্যালেন্জিং মনে হওয়াটিই স্বাভাবিক। ‘কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে এবং তৃতীয় ঢেউয়ের আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিশেষ করে জিডিপির ৬.২% বাজেট ঘাটতির বিষয়টি অভূতপূর্ব, যা ৫% কম থাকার কথা। তবে বড় লক্ষ্য নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করলে বাজেট বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হবে না।’

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি