৪১ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিবন্ধন করেছেন ১৮ লাখ

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত, টিকাদানেই ঘাটতি

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত, টিকাদানেই ঘাটতি
সর্বমোট পঠিত : 345 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

করোনা মহামারির দীর্ঘ ছুটি শেষ করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। আবাসিক হলগুলো ধুয়ে-মুছে সাফ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে তাদের বিভাগ ও আবাসিক হলগুলো। বিভিন্ন সেমিস্টার ও চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষাগুলোর রুটিন নির্ধারণের কাজ করছেন সংশ্নিষ্ট ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। তবে করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা বলা হলেও সে কাজে এখনও রয়ে গেছে বড় ধরনের ঘাটতি। এখন পর্যন্ত অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীরই নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিতে পেরেছে মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ। দুই ডোজ সম্পন্ন হয়েছে আরও কম শিক্ষার্থীর।

করোনা মহামারির দীর্ঘ ছুটি শেষ করে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। আবাসিক হলগুলো ধুয়ে-মুছে সাফ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত হচ্ছে তাদের বিভাগ ও আবাসিক হলগুলো। বিভিন্ন সেমিস্টার ও চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষাগুলোর রুটিন নির্ধারণের কাজ করছেন সংশ্নিষ্ট ডিন ও বিভাগীয় প্রধানরা। স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। তবে করোনাভাইরাসের টিকার নিবন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা বলা হলেও সে কাজে এখনও রয়ে গেছে বড় ধরনের ঘাটতি। এখন পর্যন্ত অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীরই নিবন্ধন সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিতে পেরেছে মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ। দুই ডোজ সম্পন্ন হয়েছে আরও কম শিক্ষার্থীর।

কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা টিকা পাননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতেই তাদের টিকাদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর আগে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, টিকাদান নিবন্ধনের কাজ শেষ করে ২৭ অক্টোবরের পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ। এর মধ্যে ৫১ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। আর ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় চার লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দুই হাজার ২৫৮টি কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ২৮ লাখ; উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় পাঁচ লাখ। আর আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন আরও প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী।

ইউজিসির তথ্যমতে, গত সপ্তাহ পর্যন্ত এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ করোনা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ বা সাড়ে ১২ শতাংশ। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এক লাখের মতো শিক্ষার্থী, যার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থী প্রায় ৮০ হাজার।

ঢাবিতে সাজ সাজ ভাব :ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য চলছে সাজ সাজ রব। আগামী ৫ অক্টোবর থেকে আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সব হলে ৯০ ভাগ কাজ শেষ, কোথাও প্রায় শতভাগ। শুধু কিছু দেয়ালের রং করা এবং শেষ মুহূর্তের ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। কয়েকটি আবাসিক হলের প্রভোস্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী হলগুলো প্রায় শতভাগ প্রস্তুত। এখন শেষ ধোয়া-মোছা, চেয়ার-টেবিল ঠিক করা এসব কাজ চলছে। কিছু রং করা বাকি, সেটাও দু-এক দিনের মধ্যে হয়ে যাবে। তারা আরও জানান, হলগুলোতে ব্যাপক সংস্কারের কাজ চলছে। রিডিং রুম, ডাইনিং রুম, ক্যান্টিন, ওয়াশরুমসহ শিক্ষার্থীদের কমন ফ্যাসিলিটিগুলো প্রস্তুতের কাজ চলছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে জন্য হল গেটে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

জবির প্রস্তুতি :পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও ক্যাম্পাস খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সব বিভাগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্লাস রুমের ধোয়া-মোছা, সংস্কারের কাজও শেষের দিকে। পরীক্ষার্থীদের জন্য সব রুটে আগের নিয়মেই বাস চলাচল শুরু করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জবির রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রুম বরাদ্দ করা হয়েছে। একেক দিন একেক ব্যাচের পরীক্ষা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ বলেন, অতিরিক্ত কক্ষের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি শেষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ক্লাস রুমের সংস্কার চলছে। নষ্ট লাইট ও ফ্যান সংস্কার করা হচ্ছে।

জাবির হল খুলছে ১৫ অক্টোবরের পর : রাজধানীর অদূরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে আগামী ১৫ অক্টোবরের পরে। চলছে খোলার প্রস্তুতি। ১৫ অক্টোবরের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। ইতোমধ্যে কিছু সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রভোস্টরা জানিয়েছেন, আবাসিক হলগুলো বসবাসের জন্য এখন সম্পূর্ণ উপযোগী। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক হলের সামনে চারটি করে বেসিন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ বিভাগের ৪৪ ব্যাচের মাস্টার্স পরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তাদের সিটগুলো ফাঁকা হলে গণরুম থাকবে না বলে জানান তারা।

এদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের কারণে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। সেগুলো এখন মেরামতের কাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রেও বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেডিকেলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত নিতে ২২ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিল ও ২৫ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট মিটিং হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে যথাক্রমে ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর করা হয়েছে।

উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকা দেওয়ার পর ক্যাম্পাস পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত নেব। যদি সবকিছু ঠিক থাকে আমরা ১৫ অক্টোবরের পরে যে কোনো দিন হলগুলো খুলে দেওয়ার চিন্তা করছি। হলগুলো খোলার দুই সপ্তাহ পরে ক্লাস শুরু হবে। এর আগে শিক্ষার্থীরা হল থেকে অনলাইনে ক্লাস করবে। শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চারটি বুথ স্থাপন করা হবে।'

রাবি খোলার সিদ্ধান্ত ৩০ সেপ্টেম্বর :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খোলারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে হল ও বিভাগ সংস্কার শুরু হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু। তবে কবে নাগাদ হল ও ক্যাম্পাস খোলা হবে সেটি নির্ভর করছে শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা নেওয়ার ওপর।

জনসংযোগ দপ্তরের তথ্যমতে, রাবিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯ হাজারের বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করোনার টিকা নেওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য দিয়েছেন ১৩ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী করোনার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে উভয় ডোজ নিয়েছেন ১০ হাজার ৪৪৫ জন এবং প্রথম ডোজ নিয়েছেন দুই হাজার ৯৪২ জন।

ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য গোলাম সাব্বির বলেন, হল, বিভাগসহ গোটা ক্যাম্পাস পরিস্কার ও সংস্কারের কাজ চলছে। ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

চবি খুলতে পারে ২০ অক্টোবর :চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও খোলার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। সিন্ডিকেট সভায় প্রাথমিকভাবে ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে আবাসিক হলগুলো সংস্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে ফ্যাকাল্টিগুলোতেও করা হয়েছে সংস্কার কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কোনো শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে নগরের তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, তারা ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এজন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪৮ হাজার টিকা চেয়েছেন। সেগুলো হাতে পেলে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।

খুবির সিদ্ধান্ত ২৬ সেপ্টেম্বর :খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সব অনুষদের ডিন এবং বিভাগীয় প্রধানদের সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলগুলোর সংস্কার কাজ শেষ করতে প্রভোস্টদের নির্দেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সংস্কার কাজ শেষ করতে কয়েক দিন আগে প্রভোস্টদের নিয়ে সভাও হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি চলছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব হলের সংস্কার কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খুবি প্রশাসন জানায়, করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় না খুললেও অনলাইনে প্রথম টার্মের ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। এর আগে ডিসিপ্লিন (বিভাগ) প্রধানরা কোর্স কো-অর্ডিনেটরের মাধ্যমে নিজ নিজ ডিসিপ্লিনে অনলাইন পরীক্ষা-সংক্রান্ত মডেল টেস্ট গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় না খুললে প্রথম টার্মের পরীক্ষা গ্রহণ শেষ হলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্বিতীয় টার্মের ফাইনাল পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকরা]

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি