বাঘ

শত কিলোমিটার পেরোনো সেই বাঘ বাংলাদেশেরই

শত কিলোমিটার পেরোনো সেই বাঘ বাংলাদেশেরই
সর্বমোট পঠিত : 219 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

ভারত থেকে শত কিলোমিটার পেরিয়ে বাংলাদেশের সুন্দরবনে পৌঁছানো আলোচিত বাঘটির জন্ম বাংলাদেশেই বলে দাবি করেছেন দেশের পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ঘরের বাঘ ঘরে ফিরেছে। খাদ্যের খোঁজে সম্ভবত সেটি ভারত অংশে চলে গিয়েছিল। এরপর সেখানে এটিকে আটক করে গলায় রেডিও কলার বেঁধে আবার ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এর আগে বিভিন্ন প্রতিবেদনের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বনে জনবসতির কাছাকাছি এলে চলাচলের ধরন কেমন হয়, তা জানতে গত বছরের ডিসেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট রেঞ্জের অধীনে হরিখালি ক্যাম্পের উল্টো দিকে হরিণভাঙ্গা বন থেকে বাঘটিকে ধরা হয়।


পরে ২৭ ডিসেম্বর গলায় স্যাটেলাইট কলার লাগিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় পুরুষ বাঘটিকে। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বন্য প্রাণী ওয়ার্ডেন ভি কে যাদব ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারতের সুন্দরবন অংশে কিছুদিন ঘোরাফেরার পর বাংলাদেশের সুন্দরবনের তালপট্টি দ্বীপের দিকে এগোতে শুরু করে বাঘটি। ছোট হরিখালি, বড় হরিখালি এমনকি রাইমঙ্গল নদীও এটি পার হয়।’


ভারতের বন বিভাগের কর্মকর্তা পারভীন কাসওয়ান মঙ্গলবার সকালে টুইটবার্তায় বলেন, ‘বাঘটি ভিসা ছাড়া ভারত থেকে ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছায়। খাড়ি, দ্বীপ ও সাগর অতিক্রম করে এটি।’


টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে যাদব বলেন, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ মে পর্যন্ত ওই বাঘ তিনটি দ্বীপ অতিক্রম করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের সুন্দরবনে হরিণভাঙ্গা ও খাতুয়াঝুড়ি এবং বাংলাদেশের তালপট্টি।


১১ মের পর বাঘটির গলার রেডিও কলার থেকে সংকেত আসা বন্ধ হয়ে যায়। সংকেত অনুযায়ী বাঘটির সর্বশেষ অবস্থান ছিল তালপট্টি দ্বীপে।


যাদব বলেন, ‘কোনো কারণে বাঘটির মৃত্যু হলে তা রেডিও কলার জানাবে। কিন্তু এ ধরনের কোনো সংকেত আমরা পাইনি। এ ছাড়া কলার থেকে কোনো স্থির সংকেতও পাওয়া যায়নি। এর অর্থ বাঘটি নিরাপদেই আছে। এটির গলা থেকে কলারটি পড়ে যেতে পারে।’


এ খবরটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, একটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বাঘ বনের একটি নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এই এলাকা রক্ষায় নিয়মিত নজরদারি চালায় বাঘটি।


খাদ্যের সন্ধান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে কখনও কখনও বাঘ নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যায়। তবে পরে সেটি আবার নিজের এলাকাতেই ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে।


সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবনের ভারতীয় অংশ থেকে গলায় রেডিও কলার যুক্ত যে বাঘটি ফিরে এসেছে, সেটি মূলত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বাঘ। এটি বর্তমানে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে অবস্থান করছে। আমরা বাঘটির অবস্থান শনাক্তের জন্য পশ্চিম সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছি।


‘সবশেষ ২০১৭-১৮ সালে ক্যামেরা ট্র্যাকিং পদ্ধতিতে যে বাঘশুমারি হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশের অংশে ১১৪টি বাঘ শনাক্ত করা হয়। ওই সময়ে যে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল, তার মধ্যে একটি ছবির সঙ্গে ফিরে আসা বাঘের ডোরাকাটা দাগের মিল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন, এটা বাংলাদেশ অংশের বাঘ। কারণ, সবশেষ বাঘশুমারিতে তাদের কাছে বাঘের যে ছবি রয়েছে, তার সঙ্গে ওই বাঘটির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এতেই তো নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ফিরে আসা বাঘটি বাংলাদেশের সুন্দরবন অংশের।’


পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বণ্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুন্দরবনের একটি পুরুষ বাঘ দুই শ থেকে আড়াই শ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তার এলাকা প্রতিষ্ঠা করে। পুরুষ বাঘটির সঙ্গে দুই থেকে সাতটি পর্যন্ত বাঘিনী ওই এলাকায় থাকতে পারে। বাঘ সব সময় তার এলাকা পাহারা দেয়। খাদ্যের সন্ধানে বা অন্য কোনো কারণে এরা অন্য এলাকায় যেতে পারে। কোনো কারণে হয়তো বাঘটি হাড়িভাঙ্গা নদী পেরিয়ে ভারতের অংশে ঢুকে পড়ে। তখন হয়তো তারা বাঘটিকে ধরে গলায় স্যাটেলাইট চিপসযুক্ত রেডিও কলার পরিয়ে দেয়।


‘এ ছাড়া সুন্দরবনের বাঘের বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তাকে আপনি যতদিনই আটকে রাখেন না কেন, ছাড়া পেলে সে ঠিকই তার এলাকায় ফিরে আসবে। সে হিসাবে যে বাঘটি ফিরে এসেছে সেটি সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশের বাঘ বলে ধরে নেয়া যায়।’


আজাদ কবির জানান, ২০১৩-২০১৫ সালে যে বাঘশুমারি করা হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশের ১০৬টি ও ভারতের অংশে ৬৮টি বাঘ ধরা পড়েছিল। আর সর্বশেষ ২০১৭-১৮ বাঘশুমারিতে বাংলাদেশের ১১৪টি ও ভারতের অংশে ৭৮টি বাঘ ধরা পড়েছিল। সে হিসাবে বাংলাদেশের অংশে বাঘের সংখ্যা সব সময় বেশি ছিল।


তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাদের প্রত্যেকের ফিঙ্গার প্রিন্ট যেমন আলাদা, ঠিক তেমনি প্রতিটি বাঘের ডোরাকাটা দাগ কিন্তু আলাদা হয়। এ কারণে সহজেই কিন্তু বাঘটি কোন অংশের সেটি শনাক্ত করা সম্ভব।’

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি