শিক্ষার্থীদের পোষাক বানানোর হিড়িক

পোষাক বানানোর হিড়িক
সর্বমোট পঠিত : 270 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

কাপাসিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সালাম বলেন, আমরা গত সোমবার জেলা শিক্ষা অফিসের সমন্বয়ে মিটিং করে মনিটরিং টিম গঠন করেছি। আগামী শুক্রবার, শনিবার সকল প্রতিষ্ঠান সরজমিনে পরিদর্শন করা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি বা সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে।

করোনা বদলে দিয়েছে দুনিয়া। বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন যাত্রা। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মাঝেও। আর তারই চিত্র এখন রাজধানীসহ সারাদেশে। ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাণ খুলবে জেনে শিক্ষার্থীরা এখন ড্রেস বানাতে ভীড় করছে দর্জি দোকানে। বন্ধের এই সময়ে শিক্ষার্থীদের গায়ে আটছে না (লাগছে) আগের সেই পোষাক। দীর্ঘ এই সময়ে শারীরিক উচ্চতা বৃদ্ধি ও বাসা-বাড়িতে আটকে থেকে মুটিয়ে যাওয়ার কারণে এ সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। আর এমন চিত্র রাজধানীঘেষা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়।

গাজীপুর মহানগরের রাণীবিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তাজিম হাসান জানান, স্কুল বন্ধ থাকায় পোষাকটি যত্নে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটি এখন আর পড়তে পারছি না। স্কুল খুলছে জানতে পেরে অনেক আনন্দ লাগছে। মাকে বলেছি নতুন পোষাক বানিয়ে দিতে। মঙ্গলবার সকালে ছেলেকে নিয়ে স্কুলড্রেস কিনতে বাজারে আসলেন মা কানিজ ফাতেমা স্মৃতি। দুই দিনের মধ্যে পোষাক বানিয়ে দিবে এই শর্তে অর্ডার করেন শহরের একটি টেইলার্সে। মুরাদ হোসেন পড়ছেন কাপাসিয়ার বরুন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে।

নবম শ্রেণির এই ছাত্র একাই এসেছে বরুন বাজারের সৈকত টেইলার্সে। মুরাদ জানায়, দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় আগের পোষাক ছোট হয়ে গেছে। তাই স্কুল খোলার খবর পেয়ে নতুন পোষাক বানাতে টেইলার্সে আসি।

শুধু তাজিম কিংবা মুরাদ নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার খবরে অভিভাবকরা এখন সন্তানের জন্য স্কুল কর্তৃক নির্ধারিত পোষাক কিনতে ও বানাতে ভীড় জমাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন মার্কেট ও টেইলার্সে। তবে যারা নতুন পোষাক বানাতে বা কিনতে পাড়ছেন না তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে এক ধরনের দুশ্চিন্তা। সন্তানের চাহিদা মেটাতে না পেড়ে অনেকটা কষ্টে আছেন এসব অভিভাবকরা।

কাপাসিয়া বাজারের হাসান টেইলার্সের মালিক রুহুল আমিন বলেন, হঠাৎ স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণায় কাজের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধা রাত পর্যন্ত স্কুলড্রেসের অর্ডার নিতে হচ্ছে।

কাপড় ব্যাবসায়ী জীবন দাস বলেন, লকডাউনে দোকান বন্ধ ছিল। স্কুল খোলার খবর শুনে শিক্ষার্থীরা ভীড় করছে ড্রেস বানাতে। তাই এখন ব্যাস্ত সময় পার করছি।

কাপাসিয়া কিন্ডার গার্টেনের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করেছে। স্কুল খোলায় এখন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পাবে।

তৃতীয় শ্রেণি পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক খালেদ খান বলেন, স্কুল খোলার খবর পেয়েই মেয়ে আমার বায়না ধরেছে নতুন পোষাক কিনে দিতে। তাই সব কাজ বাদ দিয়ে এসেছি মেয়ের জন্য পোষাক কিনতে।

শিক্ষার্থী আবির ও আদিবার অভিভাবক দিলরুবা জাহান বলেন, আমার ছেলে ও মেয়ে জেদ ধরেছে ২ দিনের মধ্যে তাদের নতুন ড্রেস, জুতা, মুজা কিনে দিতে। স্কুল খুলছে জানতে পেড়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।

এদিকে এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি হিসেবে গাজীপুরে চলছে ধোয়া-মোছার কাজ। রাণীবিলাসমনি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, জকি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বরুন উচ্চ বিদ্যালয়, হড়িমঞ্জুরি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ভাকোয়াদি উচ্চ বিদ্যালয়, পাবুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ এন্ড বিশ^বিদ্যালয়, টঙ্গী সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, আজিম উদ্দিন কলেজ, পিআরআলী কলেজ, রাজেন্দ্রপুর পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, ইকবাল সিদ্দিকী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন চলছে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ।

এসব কাজ তদারকি করছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষকরা।

ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, করোনার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছিলো।

অনেক শিক্ষকরা তাদের পেশাও বদলে ফেলেছিলো। প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণায় এখন প্রাণ ফিরে পাবে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে।

গাজীপুরের কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে, করোনার কারণে বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে নাজেহাল হয়ে আছে। তাই সকল প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ, চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ সব কিছু পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছে পরিচ্ছন্নকর্মীরা। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের আশেপাশে এবং মাঠে জমে থাকা আগাছা পরিষ্কার করতেও দেখা গেছে।

কাপাসিয়ার ভাকোয়াদি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হালিম সরকার বলেন, করোনায় আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা এক ধরনের মানষিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণায় প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। শ্রেণিকক্ষ এবং মাঠ পরিষ্কারের কাজ চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আমরা আমাদের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেছি। তাছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের হাত ধোয়ার জন্যও আমরা ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছি।

কাপাসিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সালাম বলেন, আমরা গত সোমবার জেলা শিক্ষা অফিসের সমন্বয়ে মিটিং করে মনিটরিং টিম গঠন করেছি। আগামী শুক্রবার, শনিবার সকল প্রতিষ্ঠান সরজমিনে পরিদর্শন করা হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি বা সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে।

গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে ১৯টি সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। গাজীপুরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসব নির্দেশনা মেনেই প্রতিষ্ঠাণ খোলা হবে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি