‘রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ’

সর্বমোট পঠিত : 319 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা পেয়ে জারুলছড়ি ক্যাম্পের চৌকস পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়েন। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছজ্ঞান করে কাপ্তাই লেকে সাঁতার কেটে কচুরিপানার ঝাঁকের কাছে পৌঁছায়। কচুরিপানার কাছাকাছি গিয়ে দা, শাবাল দিয়ে কচুরিপানা কাটতে কাটতে সামনের দিকে এগুতে থাকে। দীর্ঘ ১ ঘন্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে পর্যটকদলের কাছে পৌঁছেন পুলিশ সদস্যরা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পর্যটকদের সবসময় ভ্রমণে কাছে টানে। আর তাই রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থেকে এস.এম. রিয়াদ জিলানীসহ ৮জনের একটি দল গতকাল মঙ্গলবার ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং তারিখ সকালে রাঙ্গামাটি জেলায় ভ্রমণে আসেন। রাঙ্গামাটিতে এসে প্রথমে সদর থেকে বোট ভাড়া করে তারা শুভলং ঝরণার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

কাপ্তাই লেকের অনিন্দ্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে শুভলং ঝর্ণায় পৌঁছে যায় তাদের পর্যটক দল। শুভলং ঝর্ণার অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করে নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর উদ্দেশ্য তারা দুপুর ১২টায় শুভলং থেকে সদরের দিকে রওনা করেন।

কিন্তু পথের মধ্যেই ঘটে বিপত্তি।কাপ্তাই লেকে থাকা সুবিশাল কচুরিপানার একটি ঝাঁক পর্যটকদের বোটকে আটকে ধরে। শত চেষ্টা করেও বোট চালক ওই কচুরিপানার ঝাঁক অতিক্রম করতে পারেনি।বোট চালকের প্রাণপণ চেষ্টার একপর্যায়ে বোটের পাখা নষ্ট হয়ে যায়।

এতে বোটচালক ও আটকে পড়া পর্যটকরা নিজেদের উদ্ধারে কচুরিপানা পরিষ্কার করতে প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কচুরিপানা পরিষ্কার করে নিজেদের উদ্ধারে চেষ্টা করে পর্যটক দল।

দীর্ঘ ভ্রমণ করে রাঙ্গামাটিতে এসে সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যান। এ সময়ে পাশ দিয়ে যাওয়া মানুষজনের কাছে খাবারের জন্য আকুল হয়ে পড়ে পর্যটকদলটি।

খাবারের আকুলতা বুঝাতে গিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া এক পর্যটককে মিনতি করে বলে, আপনার হাতের এক লিটার পানির বোতলটি আমাকে দিন, আমি আপনাকে ৫০০ টাকা দিব কিন্তু ৫০০ টাকার বিনিময়েও পানির বোতল পাওয়া যায় নাই।

এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে দেখে পর্যটকদের মনে ভয় জাগতে শুরু করে, এখন কি হবে? আমরা কিভাবে এ স্থান থেকে উদ্ধার হব? এরূপ নানা ধরণের চিন্তা নিজেদের মধ্যে জেঁকে বসে। এরূপ নানা চিন্তা থেকে উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে পর্যটক দল।

উপায়ন্তর না পেয়ে, বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দেন তাদেরই একজন। ৯৯৯ থেকে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুম কল পেয়ে পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেনের নির্দেশনায় ঘটনাস্থলের কাছে কোতয়ালী থানাধীন জারুলছড়ি পুলিশ ক্যাম্পে খবর পৌঁছায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম এবং পর্যটকদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নির্দেশনা পেয়ে জারুলছড়ি ক্যাম্পের চৌকস পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়েন। পুলিশ সদস্যরা নিজেদের জীবনের মায়া তুচ্ছজ্ঞান করে কাপ্তাই লেকে সাঁতার কেটে কচুরিপানার ঝাঁকের কাছে পৌঁছায়। কচুরিপানার কাছাকাছি গিয়ে দা, শাবাল দিয়ে কচুরিপানা কাটতে কাটতে সামনের দিকে এগুতে থাকে। দীর্ঘ ১ ঘন্টা কচুরিপানা পরিষ্কার করে পর্যটকদলের কাছে পৌঁছেন পুলিশ সদস্যরা।

পর্যটকদের উদ্ধার করে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের খাওয়ার বিস্কুট, পানি প্রভৃতি দিয়ে পর্যটকদের ক্ষুধা নিবারণ করেন। জারুলছড়ি ক্যাম্পে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের এ সহমর্মিতা দেখে পর্যটকরা আপ্লুত হয়ে পড়ে। এতদিন পুলিশ সম্পর্কে মানুষের কাছে নেতিবাচক কথা শুনে এসেছে, বাস্তবে এসে আজকে আসল পুলিশ সদস্যকে দেখেছে। এতদিন ধরে যে ধারণা ছিল তাদের কাছে এটা আজকে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

পর্যটকদের মানসিক প্রশান্তি এনে জারুলছড়ি পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা রাত ৯টার সময় পলওয়েল পার্কে পর্যটকদের নিয়ে আসে। পলওয়েল পার্কে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পর্যটকরা এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।

বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ এরকম তরিৎ গতিতে ব্যবস্থা নিতে পারে, তার স্বাক্ষী হতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করে পর্যটকরা।

এসময়, বাংলাদেশ পুলিশ, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ও রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলে, “চারদিকে যখন ঘোর অন্ধকার দেখতে ছিলাম তখনই আলোর পথ দেখিয়ে নিজেদের নতুন জীবন দান করলো বাংলাদেশ পুলিশ । তাই বাংলাদেশ পুলিশ তথা রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।”

মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি