কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন ও ইউরো চ্যাম্পিয়নের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বনির্ধারণী ম্যাচের ধারণা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে আশি-নব্বইয়ের দশকেও এই ম্যাচ হয়েছে, তখন নাম ছিল আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি কাপ। দুবার (১৯৮৫, ১৯৯৩) আয়োজিত আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি কাপেরই পরিবর্তিত রূপ ফিনালিসিমা। আর্তেমিও ফ্রাঞ্চিতে ১৯৮৫ সালে ফ্রান্স ও ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা জিতেছিল। ১৯৯৩-এর শিরোপাটি ছিল আর্জেন্টিনার হয়ে দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনার সর্বশেষ জেতা কোনো শিরোপা, সেটির পর ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার আগে আর্জেন্টিনাও ২৮ বছরে কিছু জেতেনি।
মেসির আর্জেন্টিনা বনাম ইয়ামালের স্পেন – ফিনালিসিমার সময় নিশ্চিত হলো, তবে সেখানেও শর্ত
লিওনেল মেসি বনাম লামিন ইয়ামাল। আর্জেন্টিনা বনাম স্পেন। জিবে জল এনে দেওয়ার মতো দ্বৈরথের দেখা কবে পাওয়া যাবে, আদৌ পাওয়া যাবে কি না – এ নিয়ে অনেক গুঞ্জনই শোনা গেছে এতদিন। তা ম্যাচের দিনক্ষণ একেবারে পাকা না হলেও ম্যাচটা কবে হবে সেটা অবশেষে চূড়ান্ত হলো।
ইউরো চ্যাম্পিয়ন আর কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নের দ্বৈরথ ‘লা ফিনালিসিমা’ আগামী বছরের মার্চে হবে বলে নিশ্চিত করেছে স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক এএস। টানা দুবারের কোপা আমেরিকাজয়ী আর্জেন্টিনা আর বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেনের এই লড়াইয়ের ভেন্যু, কিংবা নির্দিষ্ট তারিখ নিশ্চিত হওয়ার আগে অবশ্য কিছু শর্ত পূরণ হতে হবে।
সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে অবশ্য দুই ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। আর্জেন্টাইন বিখ্যাত সাংবাদিক গাস্তন এদুল জানাচ্ছেন, তারিখ হিসেবে ১৭ কিংবা ২৫ মার্চ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আর এএস লিখেছে, ম্যাচটা হতে পারে ২৬ কিংবা ৩১ মার্চ।
আর ভেন্যু হতে এরই মধ্যে তিন দেশ থেকে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। ২০২২ সালে প্রথম ফিনালিসিমা হয়েছিল লন্ডনে, সে সময়ের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ইউরোজয়ী ইতালির মধ্যকার ম্যাচটি দারুণ সফলভাবে আয়োজন করা লন্ডন এবারও আর্জেন্টিনা-স্পেনের ফিনালিসিমা আয়োজনে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম দিয়ারিও ওলে জানাচ্ছে, ইংল্যান্ডের পাশাপাশি কাতার আর সৌদি আরবও ম্যাচটি আয়োজনে আগ্রহী। তিন দেশের মধ্যে সৌদি আরবের আগ্রহই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জোরাল বলে জানাচ্ছে দিয়ারিও ওলে।
এএস লিখেছে, গত অক্টোবরে প্যারাগুয়ের আসুনসিওনে ফিফার ৭৫তম কংগ্রেসে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দর সেফেরিন ম্যাচটি আয়োজনের মতো সময় খুঁজে বের করতে আহ্বান জানিয়েছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া ও স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএ) সভাপতি রাফায়েল লুজানকে। তাপিয়া ও লুজান মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন মার্চে ম্যাচটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
যদিও এখানে একটা শর্ত আছে। ম্যাচটি আয়োজনের আগে অংশ নেওয়া দুই দল আর্জেন্টিনা ও স্পেনের আগামী বছরের বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডায় হতে যাওয়া ২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে, তবে স্পেনের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব এখনো শুরুই হয়নি। আগামী সেপ্টেম্বরে বুলগেরিয়া ও তুর্কিয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাছাইপর্ব শুরু করবে স্পেন, এরপর অক্টোবরে তাদের ম্যাচ জর্জিয়ার সঙ্গে। অক্টোবরে বুলগেরিয়ার সঙ্গে ফিরতি ম্যাচের পর নভেম্বরে গ্রুপের বাকি দুই সঙ্গীর (জর্জিয়া ও তুর্কিয়ে) সঙ্গে ফিরতি ম্যাচ স্পেনের।
ঝামেলা হলো, বাছাইপর্বে প্রতি গ্রুপের সেরা দলই শুধু বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা পাবে, দ্বিতীয় দল খেলবে প্লে-অফে (স্পেন সেরা দুইয়ে না থাকলেও সমস্যা নেই, নেশনস লিগের র্যাঙ্কিংয়ে তারা সবচেয়ে এগিয়ে বলে বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপের সেরা দুইয়ে না থাকলেও তাদের প্লে-অফে খেলা নিশ্চিত)। স্পেন গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপে জায়গা পাবে বলেই অনুমান সবার, কিন্তু তা না হলে? প্লে-অফের ম্যাচগুলো মার্চেই হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে ফিনালিসিমার ম্যাচটি জুনে বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে আয়োজন করতে হতে পারে, যা আর্জেন্টিনা বা স্পেনের কেউই চাইছে না। বিশ্বকাপে দুই দলই সবচেয়ে বড় ফেবারিটদের মধ্যে পড়ে, বিশ্বকাপের ঠিক আগে কৌশল ঝালাই করার সময়ে এমন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে কে খেলতে চায়!
তা মার্চেই হোক বা পরে - ফিনালিসিমা শেষ পর্যন্ত আয়োজিত হলে ফিফার নতুন এই আয়োজনের দ্বিতীয় সংস্করণ হবে এটি। এর আগে ২০২২ ফিনালিসিমায় ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইতালিকে ৩-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন ও ইউরো চ্যাম্পিয়নের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বনির্ধারণী ম্যাচের ধারণা অবশ্য নতুন নয়। এর আগে আশি-নব্বইয়ের দশকেও এই ম্যাচ হয়েছে, তখন নাম ছিল আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি কাপ। দুবার (১৯৮৫, ১৯৯৩) আয়োজিত আর্তেমিও ফ্রাঞ্চি কাপেরই পরিবর্তিত রূপ ফিনালিসিমা। আর্তেমিও ফ্রাঞ্চিতে ১৯৮৫ সালে ফ্রান্স ও ১৯৯৩ সালে আর্জেন্টিনা জিতেছিল। ১৯৯৩-এর শিরোপাটি ছিল আর্জেন্টিনার হয়ে দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনার সর্বশেষ জেতা কোনো শিরোপা, সেটির পর ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার আগে আর্জেন্টিনাও ২৮ বছরে কিছু জেতেনি।
মন্তব্য