বগুড়ায় প্রাক্তন স্বামী ও তার বাহিনীর রোষানল থেকে বাঁচতে সাংবাদিক সম্মেলন

মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কান্নাভরা কন্ঠে বাঁচার আকুতি জানান মোছা: রিমু নামের ভুক্তভোগী নারী।
সর্বমোট পঠিত : 16 বার
জুম ইন জুম আউট পরে পড়ুন প্রিন্ট

রিমু প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, তারা চারজনের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাদের এই অসহায় মুহুর্তে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন । নইলে মাহবুব সাঈদীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে হবে তাদের মর্মে সকলের কাছে বাঁচার আকুতি জানান।

বগুড়ায় এ্যাপোলো ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী ও তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে এক নারী সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কান্নাভরা কন্ঠে বাঁচার আকুতি জানান মোছা: রিমু নামের ভুক্তভোগী নারী। রিমু শাজাহানপুর উপজেলার খরনা নাদুরপুকুর এলাকার রুহুল আমিনের মেয়ে।  তবে তিনি বর্তমানে শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। 

বগুড়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলনে কান্না জড়িত কণ্ঠে রিমু বলেন, ২০১৯ সালে  এ্যাপোলো ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী মাহবুব সাঈদীর সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর একটি মেলায় তারা দেখা করেন এবং তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।  ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল তাকে মাহবুব তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেন। রিমুর বাবা সিঙ্গগাপুর প্রবাসী ছিলেন যেখানে তিনি ভালো আয় করতেন এবং সেখানে এক্সিডেন্ট করে ইন্সুরেন্স কোম্পানি হতে কিছু টাকাও পায়। এর মধ্যেই মাহবুব সাইদী তার পরিবার ও বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কেও অবগত হয়। মাহবুব সাইদী একজন প্রচন্ড অর্থলোভী ও নারী পিপাষু প্রকৃতির লোক ছিল যা তার আগে জানা ছিলনা। বাবার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সে একটা ফাঁদ তৈরী করে। এপোলো ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশান নামের কোম্পানী খোলার কথা বলে এবং তাকে ২০ শতাংশ শেয়ার মালিক করার কথা বলে তার বাবার থেকে ৫০ লাখ টাকা নেয়। ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী এই টাকা ও মালিক হওয়ার শেয়ার সংক্রান্ত বিষয়ে সে ও মাহবুব সাঈদী চুক্তিপত্রে সাক্ষরও করেন । এরপর ব্যবসায়ী সম্পর্কে জড়ানোর পর মাহবুব সাইদী তার সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করে এক পর্যায়ে তার স্ত্রী ছেলে থাকা সত্ত্বেও সে তাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। রিমু নিজে ডিভোর্সি হওয়ায় তার বাবা মাকে ম্যানেজ করে সে ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল তার হাকির মোড়ে ভাড়া বাড়ীতে রেজিস্ট্রিশন কাবিন নামা মূলে দশ লাখ টাকা দেনমোহরানা ধার্যে বাঁকী রেখে বিবাহ সম্পন্ন করেন তারা। 

রিমু বলেন,  আমাকে কোম্পানীর ম্যানেজিং পর্যায়ে নিয়োজিত করে দেয় যার ফলে কোম্পানির ম্যানেজার রুবেলের অনিয়ম কার্যক্রমের ব্যাপারে জানতে পারি। আমি তার বিভিন্ন অর্থনৈতিক জালিয়াতি ধরি এবং কোম্পানী থেকে সাপ্লাইকৃত জেনারেটরের স্টিকার পরিবর্তন করে বেশি কেভিএ দেখানোর জালিয়াতির ব্যাপারে মাহবুব সাইদীকে সতর্ক করি। এ ব্যাপারে মাহবুব সাইদী বলে বড় কোম্পানী চালাতে গেলে একটু এদিক সেদিক করতেই হয়। এইসব ব্যাপার আমার নজরে আসা ও মাহবুব সাইদীর বড় বউ এর সহযোগীতায় রুবেলের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারনে মাহবুব সাইদীর সাথেও আমার সম্পর্কের টানাপোড়ন হয়। সেই সময় আমাকে কোম্পানির লভ্যাংশ দেওয়া বা অন্যান্য কাজের অধিকার বন্ধ করে দেয়। এরপর আমার বিনিয়োগের টাকার অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তারপর সে ধীরে ধীরে আমাকে সরানোর পায়তারা করে। সে ম্যানেজার রুবেলের সহযোগিতায় ছাত্রলীগের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন আকন্দসহ তার ছেলেপেলেদের নিয়ে তাকে চার মাথায় মাহবুব সাইদীর চাচার কাজী অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসীদের জিম্মির মুখে আমার ও আমার মা এর স্বাক্ষর নেয়। এখানে আমাকে কোনো দেনমোহরের ও খোরপোষ, ব্যবসায়ীক নিয়োগের কোনপ্রকার অর্থ পরিশোধ না করে টাকা না দিয়ে উল্টো হুমকি ধামকি দেয় এই ব্যাপারে কথা বললে প্রানে মেরে ফেলবে। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সেখান থেকে চলে যাই। যাওয়ার সময় অপরিষোধিত যাবতীয় পাওনা দাবী করলে মাহবুব সাইদী সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে। আমাকে এবং আমার মা কে তার চাচার কাজী অফিস থেকে বের করে দেয়।

রিমু আরও বলেন, তারপর আমি আমার বাবার বাড়ীত অবস্থান করি এবং ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল জোরপূর্বক কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করে নেয়ার জন্য ১৮/০৫/২২ তারিখে আমি অপহরণ ও দেনমোহরের জন্য ৮৩১ সি/২২ নং মামলা করি। এর প্রেক্ষিতে আরো বিভিন্ন মামলার উদ্ভব হয় যা আদালতে এখনো চলমান। তারপর থেকে আমার অসহনীয় জীবনের শুরু। মাহবুব সাইদীর হুকুমে কর্মচারী ম্যানেজার রুবেল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার পুরো পরিবারের উপর সার্বক্ষনিক নজর রাখে এবং আমাদেরকে বগুড়া ছাড়া করার জন্য পুলিশ প্রসাশন দিয়েও ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি দেয়। মাহবুব সাইদীর আদেশক্রমে রুবেল আমার ছোট বোনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ায় তার কলেজ যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আমরা জীবিকা চালানোর জন্য টিএমএসএস হসপিটালের পিছনে ছোট একটি চায়ের দোকান দিয়েছি। সেখানেও রুবেল তার প্রাক্তন স্বামীর নির্দেশনায় সার্বক্ষনিক সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। আমি শুধু অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নয়, শারিরিক ও মানুষিকভাবেও বিপর্যস্থ হচ্ছি৷ 

রিমু প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, তারা চারজনের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তাদের এই অসহায় মুহুর্তে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন । নইলে মাহবুব সাঈদীর  অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিতে হবে তাদের মর্মে সকলের কাছে বাঁচার আকুতি জানান। 


মন্তব্য

আরও দেখুন

নতুন যুগ টিভি