পার্বত্য জেলাগুলোতে বর্ষা এলেই পাহাড় ধসের আতঙ্কে দিনরাত কাটায় পাদদেশে থাকা বাসিন্দারা। প্রতি বর্ষায়ই কোথাও না কোথাও ধসে পাহাড়, ঘটে প্রাণহানি। তারপরও বসতবাড়ি ছেড়ে যেতে চান না এই লোকজন। ঝুঁকি নিয়েই সেখানে বাস করে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ।
জীবনের শঙ্কা, তবুও পাহাড়ে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা
বান্দরবানে গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিভিন্ন সড়কের দুপাশের মাটি সরে গেছে। যেকোনো সময় মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়তে পারে, জানেন বাসিন্দারা।
সদরের কালাঘাটার পাহাড়বাসী আলী হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে আমি অনেক কষ্ট করে এ জায়গাটি কিনে জঙ্গল সামান্য ছাঁটাই করে ঘর তৈরি করেছি। প্রতিবছর বর্ষায় আমি পরিবারকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে রাত যাপন করি। পাহাড় প্রতিবছরই কমবেশি ধসে পড়ে। তবে, এখনও আমাদের এখানে বড় ধরনের সমস্যা হয়নি। এবারের টানা বৃষ্টিতে আমি পরিবার নিয়ে ভয়ে আছি। কিন্তু কী করব, যাব কোথায়।’
বান্দরবান পৌরসভার ইসলামপুরের বাসিন্দা মোহাম্মদ লিয়াকত আলী জানান, ‘বর্ষা এলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরে যেতে বলে। কিন্তু কোথায় যাব? আশ্রয়কেন্দ্রে কদিন থাকব? গরিব মানুষ থাকার জায়গা নাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাই ঝুঁকিতে পাহাড়ে থাকি। সরকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিলে চলে যাব।’
এ বক্তব্য পাহাড়বাসী সবারই।
বান্দরবানের মৃত্তিকা কর্মকর্তা মাহাবুব আলম জানান, পাহাড়ের ধাপ কেটে বসতবাড়ি নির্মাণ, অপরিকল্পিত বৃক্ষনিধনসহ বিভিন্ন কারণে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যাচ্ছে। ফলে টানা বৃষ্টি হলেই মাটি ধসে পড়ছে। এ ছাড়া নদী, ছড়া ও খাল থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে পার্বত্যাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এখনই সতর্ক না হলে পাহাড় ধসে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ু অব্যাহত থাকার কারণে এ বৃষ্টি চলবে আরও কিছুদিন। তাই এখনই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে পরামর্শ দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
প্রতিবছরই বর্ষায় পাহাড়াবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়। এতে কিছুদিনের জন্য সরে গেলেও বর্ষা শেষে আবারও তারা পাহাড়ে ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো থেকে লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে। সরিয়ে নিতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’
পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে বান্দরবান জেলা সদরে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়িতে ২ জন, ২০১২ সালে লামায় ২৮ জন ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ১০ জন, ২০১৫ সালে লামায় ৪ জন, সিদ্দিকনগরে ১ জন ও সদরের বনরূপা পাড়ায় ২ জন এবং সবশেষ ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭ জন ও ২৩ জুলাই রুমা সড়কে পাঁচজন নিহত হয়েছেন।
মন্তব্য